হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত মূলত ডানকুনি থেকে খানা জংশনের মধ্যে সর্বাধিক ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। ফাইল চিত্র।
বেঙ্গালুরু-মহীশূর রুটে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলে ঘণ্টায় গড়ে ৭৫ কিলোমিটার গতিতে এবং এখনও পর্যন্ত সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘মন্থরতম’ বন্দে ভারত। তবে অচিরেই হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত তার দোসর হতে চলেছে বলে রেলের খবর। কারণ, তারও গড় গতিবেগ হতে চলেছে ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার!
প্রশ্ন উঠছে, পূর্ণ গতিতে ট্রেন ছোটানোর জন্য লাইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার না-করে, যথেষ্ট পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না-করে সাততাড়াতাড়ি এই বন্দে ভারত চালু করা হচ্ছে কেন? ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে নজর রেখেই কি এই তৎপরতা?
রেল জানাচ্ছে, হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত মূলত ডানকুনি থেকে খানা জংশনের মধ্যে সর্বাধিক ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। তার পর থেকেই গতি কমে হবে ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। এখন হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেস ৫৬৬ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে সময় নেয় আট ঘণ্টা ২০ মিনিট। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটা করে নতুন যে-বন্দে ভারতের উদ্বোধন করতে চলেছেন, হাওড়া থেকে তার নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছতে প্রায় আট ঘণ্টা সময় লাগবে বলে রেল সূত্রের খবর।
মাত্র ২০ মিনিট সময় বাঁচাতে এত উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রেলেরই অন্দরে। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, কাগজে-কলমে আধুনিক বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। কিন্তু হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে বঙ্গের প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সর্বাধিক গতি হবে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। তা-ও সেটা সারা পথের খুব সামান্য অংশে। রেল জানাচ্ছে, রেললাইনের স্বাস্থ্যের কারণে বাকি পথের অনেক জায়গাতেই ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতেও ওই ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। বাস্তবে ঘণ্টায় গড়ে ওই ট্রেন ছুটবে মাত্র ৭২ কিলোমিটার গতিতে।
লাইনের স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি না-ঘটিয়ে এ ভাবে তড়িঘড়ি বন্দে ভারত চালু করার মধ্যে ভোট-রাজনীতির চমক দেখছেন অনেকেই। এ পর্যন্ত গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটক-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে চালু হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
একই ভাবে অভিযোগ উঠছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এ রাজ্যের বন্দে ভারতকে ‘চমক’ হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। যদিও শাসক দলের নেতারা একে রাজ্যের ক্ষেত্রে বড় প্রাপ্তি বলে দাবি করছেন। তবে রেলকর্তাদের একাংশের দাবি, গতি বাড়ানোর কাজ চলছে। ফলে ভবিষ্যতে সময় অনেকটাই বাঁচবে। তা ছাড়া শতাব্দী এক্সপ্রেসের বিপরীতে চালানোর ফলে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের বিশেষ সুবিধা হবে।