চাইতে গিয়েছিলেন ভরণপোষণের খরচ। বদলে স্বামীর হাতে ছুরিকাহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন এক বধূ। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে ভদ্রেশ্বরের চাঁপদানিতে। জামিলা বিবি নামে ওই বধূর ভাই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর অভিযুক্তের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁপদানির আরবিএস রোডের বাসিন্দা জামিলা বিবির প্রথম পক্ষের স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর চলতি বছরের ৮ই জুন স্থানীয় পিবিএম রোডের বাসিন্দা মহম্মদ ইরসাদের সঙ্গে বিয়ে হয়। আগের পক্ষের এক মেয়ে এবং দুই ছেলে রয়েছে জামিলার। ইরসাদও বিবাহিত। তার একটি রেশন দোকান রয়েছে। বিয়ের পর জামিলা তার পৈত্রিক বাড়িতেই বাস করেন। বাড়িটি জামিলার নামে রয়েছে। জামিলা বিবির অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই ইরসাদ চাপ দিতে থাকে যে ওই বাড়ি তার নামে করে দিতে হবে। জামিলার অভিযোগ, এ জন্য ইরসাদ তাঁর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতে তাকে। পারিবারিক বিবাদ চরমে ওঠে। জামিলার আরও অভিযোগ, মাস দুয়েক ধরে ইরসাদ আর তাঁর সঙ্গে থাকে না। এমনকী কোনও যোগাযোগ বা সংসারের খরচও দিচ্ছে না। এই অবস্থায় সংসারের খরচ চাইতে বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি ইরসাদের দোকানে যান। অভিযোগ, সেই সময় ইরসাদ জামিলাকে বলে বাড়ি তার নামে লিখে না দিলে সে সংসারের খরচ দেবে না। এ নিয়ে দোকানেই জামিলা ও ইরসাদের ঝগড়া বেধে যায়। জামিলার অভিযোগ, ঝগড়ার মধ্যেই ইরসাদ তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ডেকে এনে তাকে মারধর করে। এরপর হঠাৎই দোকানের ভিতর থেকে বস্তা কাটার ছুরি নিয়ে এসে ইরসাদ তাঁর পেটে একাধিক আঘাত করে। চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জামিলা। তাঁর চিৎকারে বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। রক্তাক্ত অবস্থাতেই জামিলা বাড়ির দিকে আসতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। সেই সময় জামিলার এক প্রতিবেশী কাদের পারভেজ ওই অবস্থা দেখে তাঁকে সঙ্গে করে চাঁপদানি পুলিশ ফাঁড়িতে যান। ফাঁড়ির পুলিশ তাঁদের পরে অভিযোগ দায়ের করতে পরামর্শ দিয়ে আগে হাসপাতালে যেতে বলে চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে জামিলাকে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পেটে গভীর ক্ষত হওয়ায় ১৮টা সেলাই দেওয়া বলে হাসপাতাল সূ্ত্রের খবর।
শুক্রবার হাসপাতালে শুয়ে জামিলা বিবি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই টাকা পয়সার জন্য ইরসাদ অত্যাচার করত। দু’মাস ধরে ও সংসার খরচ দিচ্ছিল না। আমাকে বলত বাড়িটা লিখে না দিলে সংসারের খরচ দেবে না। গতকাল ওর দোকানে টাকা চাইতে গেলে ইরসাদ ওর দাদা, ভাই এবং ভাইপোকে নিয়ে আমাকে মারতে থাকে। তারপর হঠাৎই দোকান থেকে একটা ছুরি নিয়ে এসে আমার পেটে পর পর আঘাত করে। আমার চিৎকারে স্থানীয় লোকজনকে ছুটে আসতে দেখে ওরা দোকান বন্ধ করে চলে যায়। মাঝেমধ্যেই ওরা আমাকে হুমকি দিত মেরে ফেলার। এ দিন হাতে পেয়ে সেটাই করতে চেয়েছিল।’’ যদিও ঘটনার পর থকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় অভিযোগ জানাননি জামিলার পরিবার। কেন অভিযোগ জানাননি প্রশ্ন করা হলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। পাছে ফের ইরসাদ হামলা চালায়। পরে অবশ্য পুলিশের আশ্বাস পেয়ে রাতে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।
জামিলা বিবির ভাই মহম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘‘দিদির সঙ্গে ইরসাদের বিয়ে হওয়ার পর থেকেই অত্যাচার শুরু হয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম পরে ঠিক হয়ে যাবে। গত দু’মাস ধরে ইরসাদ বাড়ি আসত না। সংসারে খরচ দেওয়া বন্ধ করেছিল। এখন দেখছি খরচ চাইতে যাওয়াই দিদির কাল হল।’’
চাঁপদানি পুরসভার উপপ্রধান মহম্মদ নাসিম বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ঘটনা। ওই মহিলা কয়েক দিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন ওঁদের পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য। আমি ওঁকে বলেছিলাম কয়েক দিনের মধ্যে আপনার চাল-ডালের ব্যবস্থা করে দেব। বৃহস্পতিবার লোক মারফত জানতে পারি যে এক মহিলা রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে সঠিক কি ঘটেছে তা বলতে পারছি না।’’