বালির তৃণমূল নেতা ও পরিবেশকর্মী তপন দত্তের খুনের ঘটনায় রায়দান ফের স্থগিত রাখল আদালত। গত বুধবার এই মামলার রায়দানের কথা থাকলেও হাওড়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় শুক্রবার রায় ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন নিহত তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত আদালতের কাছে আবেদন করেন যে, ১২ তারিখ কলকাতা হাইকোর্টে এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিনের রায় যাতে ওই সিদ্ধান্তকে কোনও ভাবে প্রভাবিত করতে না পারে, সে কারণে কয়েক দিনের জন্য রায়দান যেন স্থগিত রাখা হয়। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই আবেদনের প্রেক্ষিতেই বিচারক আজ, শনিবার আদালতের সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে ঘোষণা করেন।
গত ২০১১ সালে ৬ মে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তপনবাবু এক দলীয় কর্মীকে নিয়ে মোটরবাইকে বাড়ি ফেরার পথে লেভেল ক্রসিং-এর কাছে একদল দুষ্কৃতী তাঁদের ঘিরে ধরে। খুব কাছ থেকে তাঁকে পরপর ৬টি গুলি করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার পরে বাবলু প্রসাদ নামে তপনবাবুর ওই সঙ্গীও উধাও হয়ে যান। প্রথমে বালি থানা এই খুনের তদন্ত করলেও এক সপ্তাহের মধ্যে দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সিআইডি নিশ্চিত হয়, কোনও রাজনৈতিক কারণে নয়, জলাজমি ভরাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জেরেই তপনবাবুকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার প্রায় এক মাস পরে ২০১১-র ২ জুন এই খুনে সরাসরি জড়িত সন্দেহে সুভাষ ভৌমিক ও কার্তিক দাসকে গ্রেফতার করে সিআইডি। দু’মাসের মধ্যেই মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বালি-জগাছা ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ষষ্ঠী গায়েন ও তাঁর ভাই অসিত গায়েনকে গ্রেফতার করা হয়। এর এক দিন পরেই এই খুনে সরাসরি যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী রমেশ মাহাতোকে।
ওই বছরের ৩০ অগস্ট সিআইডি মামলার চার্জশিট পেশ করে। চার্জশিটে এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাওড়ার কয়েক জন প্রথম সারির তৃণমূল নেতা-সহ ১৬ জনের নামের তালিকা পেশ করা হয়। যাতে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এবং অভিযুক্তদের মধ্যে পি রাজু ও সন্তোষ সিংহ নাম দু’জন পলাতক বলে জানানো হয়। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর সিআইডি ফের আর একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করলে দেখা যায়, তাতে ৯ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। যে ৯ জনের মধ্যে হাওড়া জেলার প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা রয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিআইডি তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। তপনবাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে এই খুনের ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়। ওই মামলা এখনও বিচারাধীন। অন্য দিকে, হাওড়া আদালতে মামলা চলাকালীন ধৃত পাঁচ জনেরই জামিন হয়ে যায়।
এ দিকে, শুক্রবারের পরে এ দিন ফের মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা থাকায় সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমে যায়। বেলা ১১টার মধ্যেই এসে পৌঁছন তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী। হাজির হন জামিনে মুক্ত আসামীরাও। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, দুপুর দেড়টা নাগাদ বিচারক প্রতিমাদেবীর আবেদনের কথা ঘোষণা করেন। জানানো হয় আজ, শনিবার আদালত সিদ্ধান্ত জানাবে। এ দিন আদালতের বাইরে এসে প্রতিমাদেবী বলেন, “এই আদালত কী রায় দেবে জানি না। তবে আগামী ১২ তারিখ হাইকোর্টে এই ঘটনা নিয়ে সিবিআই তদন্তের আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তার উপরে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, সে কারণেই বিচারকের কাছে রায়দান কয়েক দিন পিছিয়ে দিতে আবেদন করেছি।”