হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকের আগে জনসভা

রেল বাজেট থেকে সংবাদ মাধ্যম, ক্ষোভ মমতার

প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে তার আগে সভায় রেল বাজেট নিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ও রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেনি মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে জনাইয়ে হাইস্কুল মাঠে একটি সভা করেন। তিনি বলেন, “আমরা সরকারে ক্ষমতায় আসার পরেই বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করেছি।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

জনাই শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৯
Share:

জনাইয়ে সভায় মমতা।

প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে তার আগে সভায় রেল বাজেট নিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ও রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেনি মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে জনাইয়ে হাইস্কুল মাঠে একটি সভা করেন। তিনি বলেন, “আমরা সরকারে ক্ষমতায় আসার পরেই বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করেছি। এর ফলে সরকার সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৫৯টা মিটিং করেছি। এটা কম কথা নয়। অগস্টের মধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে আমি সমস্ত প্রশাসনিক বৈঠক শেষ করব। এর ফলে ওঁরা (প্রশাসনিক কর্তারা) কাজ করার সুযোগ পাবেন।” তিনি জানান, প্রত্যেক জেলার আলাদা আলাদা করে রিপোর্ট কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলো তিনি প্রতিটা খুঁটিয়ে পড়েন। আর সে জন্যই কি কাজ হচ্ছে বা না হচ্ছে তা বুঝতে পারেন। কারণ তা না হলে তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দেবেন কী ভাবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সমালোচনা পছন্দ করি। কারণ মনে করি সমালোচনা আলোচনার পথ খুলে দেয়। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা হিংসুুটের মতো আচরণ করে। সব সময় মাটিতে টেনে নামায়। আসলে ওরা হচ্ছে কাঁকড়ার মতো। এই ধরনের মানুষ আমার পছন্দ নয়।” বামেদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, “৩৫ বছর ধরে তোমরা এ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলে। কাজ করার সুযোগ ছিল। তা সত্ত্বেও কোনও কাজ করনি কেন?

Advertisement

জেলার উন্নয়ন নিয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হুগলিতে অনেক ভাল কাজ হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে রাজ্যে এক নম্বর এই জেলা। মিড ডে মিলের কাজ ভাল হয়েছে। স্কুলগুলিতে স্টুডেন্টস টয়লেট নিয়ে ভাল কাজ হয়েছে। কিষান ক্রেডিট কার্ড পেয়ে উপকৃত হয়েছেন চাষিরা। তবে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এপিএল তালিকাভুক্তদের মধ্যে ১৭ হাজার সংযোগ এখনও বাকি আছে। সেগুলিও হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, “সিঙ্গুরে ট্রমা সেন্টার, সবুজ দ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পাশাপাশি চন্দননগর, ফুরফুরাশরিফ ও তাকররকশ্বরেও পর্যটনের কাজ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বাইপাস রাস্তা। যা পাঁশকুড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, বর্ধমান হয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।”

প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে।

এর পরেই রেল বাজেট নিয়ে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, “আজকে আমি এখানে উন্নয়নের বৈঠকে এসেছি তাও বলতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ, বাংলা বঞ্চিত হলে তো আমি চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আজ রেলবাজেট ঘোষণা হয়েছে। এই বাজেটের প্রতিবাদে সব দলের সাংসদদের প্রতিবাদ করা উচিত। বাংলাকে যে ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে তাতে ছেড়ে কথা বলব না।” মোদীকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, “নির্বাচনের আগে সব ভাল ভাল কথা। আর ক্ষমতায় এসেই অন্য কথা। রাজ্য থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। বেতন, পেনশন দিতেই আমার সব চলে টাকা চলে যাচ্ছে। অথচ এই ধার আমি করিনি। সিপিএম করেছিল। আমাকে তার মাসুল গুনতে হচ্ছে। ইউপিএ সরকারকে বার বার অনুরোধ করেও তারা টাকা কাটা বন্ধ করেনি। এই সরকারও একই কাজ করছে। এর আগেও বিজেপি সরকার ছিল। অটলবিহারীর সঙ্গে আমরাও ছিলাম। কিন্তু কতগুলো কাজ পছন্দ না হওয়ায় আমরা চলে আসি।”

রেল বাজেট নিয়ে ক্ষোভ উগরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা কী রেল বাজেট হয়েছে বলুন তো? এর প্রতিবাদে সব দলের সাংসদরা এক হয়েছে। আমার তো শুনে গা রি-রি করছে। ভাগ্যিস আমি লোকসভা বা রাজ্যসভায় ছিলাম না। থাকলে কী করতাম জানি না। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন ডানকুনিকে দুটো কারখানা দিয়েছি। ফ্রেট করিডর করেছি। রাজ্যেকে তিনশোটা ট্রেন দিয়েছি। আর এ বার মাত্র দু’টো। আমরা কী ভিখারি নাকি? আমরা ওটা ফিরিয়ে দেব। আমাদের ভিক্ষে চাই না।”

বাজেটের আগে ১৪.৫ শতাংশ রেলভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় ফ্রেট-এ হাত দিইনি। কারণ জানতাম ফ্রেট বাড়লে জিনিসের দাম বাড়বে। ইউপিএ সরকার যা করেছে, এরাও ঠিক তাই করছে। এরা এফডিআই নিয়ে আসছে। জেনে রাখুন যতবার ডিজেলের দাম বাড়বে ততবার রেলের ভাড়া বাড়বে, বাজেটে এ বার তেমনই বলা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলা, বিহার, ওড়িশা, তামিলনাড়ু এ বার রেল বাজেটে কিছুই পায়নি। অন্যরা পাওয়ায় আমি এতটুকু হিংসা করি না। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় সবাইকে ভাগ করে দিয়েছি। বাংলাকে যারা বঞ্চিত করেছে তাদের আমি ছাড়ব না। এ ধরনের রেল বাজেটের বিরুদ্ধে সব দলেরই সোচ্চার হওয়া উচিত।”

এ দিন সংবাদ মাধ্যমের উপরেও ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখন তো টাকায় খবর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মারা গেলেও যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, ইঁদুরে ব্যাঙ খেলেও খবরে সেই একই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

এ দিন সভার পরেই তাঁর কাছে খবর পৌঁছয় সংসদে দলীয় এক মহিলার সাংসদ নিগৃহীতা হয়েছেন। প্রশাসনিক বৈঠকের পরে তা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “লোকসভা সেই জায়গা যেটা কি না গণতন্ত্রের পীঠস্থান। একই সঙ্গে মন্দির, গুরুদোয়ারা, মসজিদ, গির্জাও। আমাদের সাংসদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা শুনেছি। দিল্লির অনেক সাংবাদিক আমাকে ফোনে তা বলেছেন। এটা অত্যন্ত অন্যায়, দুঃখের। আসলে মুখ বন্ধ করতেই এ সব করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “এখন নিজের দাবি নিয়ে কথা বলতে গেলেই সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনও শুনেছেন গভর্নর হাউসে সিবিআই ঢুকে যাচ্ছে।”

এ দিন জনাইয়ের সভা থেকে পড়ুয়াদের সাইকেল বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। চাষিদের দেওয়া হয় পাওয়ার টিলার, মৎস্যজীবীদের হাঁড়ি ইত্যাদি।

ছবি: প্রকাশ পাল ও দীপঙ্কর দে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement