অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
দাঁড় টেনে নৌকো নিয়ে প্রাণপণে পালানোর চেষ্টা করছে পাঁচ যুবক। পিছনে ভুটভুটি নৌকো নিয়ে তাদের তাড়া করছেন কয়েক জন। কিছুক্ষণ এমন চলার পরে আচমকা সামনে থেকে একটি লঞ্চ আসতে দেখেই দাঁড় টানা নৌকো থেকে চার যুবক ঝাঁপ দিল জলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ডুবসাঁতার দিয়ে পগার পার। এক জন অবশ্য নৌকোতেই বসে রইল!
বৃহস্পতিবার সকালে, বাঁধাঘাটের কাছে গঙ্গায় এই দৃশ্য দেখে চমকে যান ঘাটে থাকা মানুষজন। ভুটভুটি ও লঞ্চে উর্দিধারী পুলিশ, দাঁড় টানা নৌকোয় ভর্তি লোহার টুকরো সব মিলিয়ে কী ঘটছে প্রথমে বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। পরে জানা যায়, বালির একটি কারখানায় ঢুকে নিরাপত্তা রক্ষীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লোহার টুকরো লুঠ করে পালাচ্ছিল ওই পাঁচ যুবক। তাদের ধরতেই ধাওয়া করেছিল বালি থানার পুলিশ। সামনে দিয়েও যাতে তাদের আটকানো যায় সে জন্যই খবর দেওয়া হয়েছিল নর্থ পোর্ট থানাকেও। তাঁরাই লঞ্চ নিয়ে আসছিলেন।
পুলিশ জানায়, বালির দেওয়ানগাজী এলাকায় গঙ্গার পাড় ঘেঁষে পরিত্যক্ত জাহাজ তৈরির কারখানার ভিতরেই রয়েছে লোহার কাঠামো তৈরির একটি কারখানা। এ দিন ভোর পাঁচটা নাগাদ নৌকোয় এসে ওই যুবকেরা কারখানায় ঢোকে। তখন কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী-সহ কয়েক জন কর্মী ছিলেন। তাঁরা ওই যুবকদের দেখে চোর সন্দেহ করে লাঠি নিয়ে তেড়ে যান। অভিযোগ, আচমকাই দুই যুবক রিভলভার বার করে নিরাপত্তারক্ষী ও কারখানার কর্মীদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সরে দাঁড়াতে বলে। এর পরে প্রায় এক টন লোহার টুকরো নৌকোয় তুলে নিয়ে হাওড়ার দিকে চম্পট দেয়।
কারখানার নিরাপত্তারক্ষী গোপাল মালিক বলেন, “ওরা বেরোতেই আমরা বালি থানায় ফোন করি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও আসে।” পুলিশ দেখে, দাঁড় টেনে নৌকোটি বেলুড়ের দিকে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বেলুড় মঠ ফেরিঘাটে গিয়ে একটি ভুটভুটি নৌকো নিয়ে দাঁড় টানা নৌকোটিকে তাড়া করে।
ইতিমধ্যেই বালি থানা থেকে বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়। সেই মতো নর্থ পোর্ট থানার পুলিশও লঞ্চ নিয়ে বেলুড়ের দিকে রওনা দেয়। বাঁধাঘাটের কাছে নর্থপোর্ট থানার লঞ্চ পৌঁছতেই ওই যুবকেরা বুঝতে পারে সামনে থেকে পুলিশ চলে এসেছে। তখনই চার জন জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালায়। ইয়ামিন হালদার নামে এক যুবক অবশ্য নৌকোয় থেকে যায়। নৌকোটি আটক করে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, দিন পাঁচেক আগেও ওই কারখানায় ডাকাতির চেষ্টা করে এই যুবকেরাই। বালি থানায় অভিযোগও দায়ের করেন মালিক সুরজিত্ দত্ত। এ দিন তিনি বলেন, “পুলিশ তত্পরতার সঙ্গে মালপত্র উদ্ধার করেছে। পুলিশের কাজে আমরা খুশি।”
স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের বাসিন্দা ইয়ামিনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ স্থানীয় কয়েক জন যুবক তাকে বলে নৌকো নিয়ে একটা কারখানায় যেতে হবে। সেখানে গিয়ে কিছু পয়সা দিলে দারোয়ান লোহা দেবে। ভাল কমিশন মিলবে সেই মতো সে নিজের নৌকো নিয়ে এসেছিল। ঘটনার সময়ে সে নৌকো নিয়ে কারখানা লাগোয়া খাঁড়িতে বসে ছিল বলেই দাবি করেছে। পুলিশ জেনেছে গঙ্গা থেকে চুম্বক দিয়ে লোহা তোলার কাজ করে ইয়ামিন। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ধৃতকে জেরা করে বাকিদের খোঁজ চলছে।”