খানাখন্দে ভরা চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া রাস্তা। ছবি: তাপস ঘোষ।
বর্তমান রাজ্য সরকার পর্যটনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন নতুন জায়গা যুক্ত হচ্ছে পর্যটনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে। দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গা নতুন করে উঠে এসেছে বেড়ানোর মানচিত্রে। সাজিয়ে তোলা হচ্ছে সেই সব জায়গা। কিন্তু পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষ্ঠু পর্যটনের প্রাথমিক শর্তই সুষ্ঠু পরিবহণ এবং পর্যটকদের আবাস।
হুগলি, চুঁচুড়া, ব্যান্ডেলকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক রসদ রয়েছে। কিন্তু বামেদের আমল বা নতুন সরকারের আমলেও কেউই এ পর্যন্ত সে দিকে দৃষ্টিপাত করেনি। ফলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। অবহেলিত থেকে গিয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনা। চুঁচুড়ার একদিকে গঙ্গা এবং অন্যদিকে জিটি রোড। এই দু’য়ের মাঝে আড়াআড়িভাবে বেড়ে উঠেছে শহর। গঙ্গা যেমন পর্যটনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তেমনই জিটি রোডকে কেন্দ্র করে চুঁচুড়ার সড়ক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বর্ষায় শহরের এম জি রোডের হাল। ছবি: তাপস ঘোষ।
প্রতিদিন নিতান্ত রুটিরুজির তাগিদে গঙ্গাপাড়ের এই জনপদে বহু মানুষ আসেন। আবার অনেকে আসেন নানা কাজেও। আদালত, জেলা পরিষদ, জেলা পুলিশ লাইন, হাসপাতাল এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে। এছাড়া মিটিং, মিছিল তো রয়েইছে। তার ফলে শহরে যথেষ্ট চাপও রয়েছে। তার উপর শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘড়ির মোড় এলাকায় আসার জন্য রাস্তাগুলি রীতিমত অপরিসর। অটো, বাস, ট্রেকার আর গাড়ির ভিড়ে নিত্যদিনের যানজটে ভুগতে হয় মানুষকে।
এই সমস্যা থেকে শহরকে বাঁচাতে পর্যটনকে উৎসাহ দিতে এখানকার প্রবীণদের অভিমত, শহরে অন্তত একটা বাইপাস সড়কের পরিকল্পনা করা যেতেই পারে। তাতে যেমন শহরের উপর চাপ কমবে। তেমনই শহরে পর্যটনের সম্ভাবনা উজ্বল হবে। পাশাপাশি গঙ্গার পাড়ে কয়েকটি নিরিবিলি জায়গাকে চিহ্নিত করে তৈরি পর্যটকদের আবাস তৈরির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
সপ্তাহান্তে কাছেপিঠে দু’একদিন শহরের ভিড় থেকে কিছুটা নির্জনতা খুঁজতে মধ্যবিত্ত বাঙালির ঘর ছাড়ার রেওয়াজ রয়েছে। মানুষের সেই চাহিদাকে উসকে দিতে চুঁচুড়া, চন্দননগর, ব্যান্ডেল চার্চকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার দাবি শহরবাসীর দীর্ঘদিনের।
যদিও হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার প্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পর্যটনের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে পুরসভা সচেতনভাবে কাজ করে চলেছে। তৈরি হয়েছে হেরিটেজ কমিটি। গঙ্গার পাড়ের ঐতিহাসিক ঘাটগুলিকেও সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।”
পুরপ্রধান যাই বলুন না কেন, শহরে পর্যটকদের উপযোগী হোটেল বা আবাস সে ভাবে গড়ে ওঠেনি বলেই অভিমত শহরবাসীর। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সরকারি সার্কিট হাউস বা হোটেল থাকলেও তা অপ্রতুল। সরকারি যে সব ব্যবস্থা রয়েছে তা মূলত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সরকারি কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ তার নাগাল পান না।
স্থানীয় বাসিন্দা বিদ্যুৎ দাসের আক্ষেপ, “বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দির বহু টাকা খরচ করে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি কলকাতা থেকে এসে একদিন থেকে ব্যান্ডেল চার্চ-সহ সব এলাকা ঘুরে দেখতে চান তা হলে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, থাকার জায়গার অভাব। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নাগরিক পরিষেবার অনেক কিছু নিয়েই এখনও সমস্যা রয়েছে।”