বছর কুড়ি আগে রাজ্যের ভাগচাষি, খেতমজুরদের কিছু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য ‘প্রফলাল’ (প্রভিডেন্ট ফান্ড অব ল্যান্ডলেস এগ্রিকালচারাল লেবার) নামে একটি প্রকল্প চালু করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের পরিচালনায় ওই প্রকল্পটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে হাওড়া জেলায়। বহু উপভোক্তা সরকারি উদাসীনতায় তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েতের তরফে অর্থ-সংগ্রাহকেরাও আর অর্থ সংগ্রহে সে ভাবে উদ্যোগী হচ্ছেন না। তাঁরাও কমিশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
প্রকল্পটির এই হালের জন্য রাজ্যের বর্তমান আর্থিক সঙ্কটকেই দায়ী করেছেন জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ। কেউ কেউ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। তবে, ওই দফতরের জেলা আধিকারিক শুভ্রজ্যোতি ঘোষের দাবি, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। আমরা উপভোক্তা ও কর্মীদের প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দিই। কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা, খোঁজ নিয়ে দেখব। টাকা না পাওয়ার কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘প্রফলাল’ প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ভাগচাষি-খেতমজুররা। তাবে, এ জন্য প্রথমে তাঁদের পঞ্চায়েতে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হয়। মাসে তাঁদের ২০ টাকা করে দিতে হবে পঞ্চায়েত নিযুক্ত অর্থ সংগ্রাহকের কাছে। রাজ্য সরকারও একই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করবে ওই উপভোক্তার জন্য। ৬০ বছর বয়স হলে উপভোক্তারা মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত পাবেন। প্রকল্প চলাকালীন উপভোক্তারা কেউ দুর্ঘটনায় জখম হলে ৩০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে ওই প্রকল্পে। তা ছাড়া, উপভোক্তাদের পরিবারের দু’জন পড়ুয়ার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য বছরে ১২০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে ওই প্রকল্পে গোটা জেলায় অন্তত ৬০ হাজার উপভোক্তা রয়েছেন।
শুধু উপভোক্তারাই নন, ওই প্রকল্পে উপকৃত হওয়ার সংস্থান রয়েছে অর্থ-সংগ্রাহক এবং পঞ্চায়েতে যাঁরা উপভোক্তাদের জমা দেওয়া টাকা কম্পিউটারে নথিভুক্ত (ডেটা-এন্ট্রি) করেন, তাঁদেরও। পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকেরা জানান, প্রকল্পের নিয়মে রয়েছে, একজন উপভোক্তার থেকে মাসে ২০ টাকা আদায় করলে দু’টাকা করে কমিশন পাবেন অর্থ-সংগ্রাহকেরা। যাঁরা ‘ডেটা-এন্ট্রি’ করবেন, তাঁরা প্রত্যেক উপভোক্তাপিছু পাবেন ৬০ পয়সা করে। কিন্তু না উপভোক্তা, না অর্থ সংগ্রাহক, না তথ্য নথিভুক্তের কাজে নিয়োজিত কর্মী কোনও পক্ষই ওই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। শ্যামপুরের শশাটি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা পার্থ মিত্র দু’ বছর আগে মারা যান। তিনি ওই প্রকল্পের উপভোক্তা ছিলেন। পার্থবাবুর প্রাপ্যের জন্য তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা পাত্র স্থানীয় পঞ্চায়েতে সেই সময়েই আবেদন করেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, “বারবার দফতরে গিয়েছি। কিন্তু খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। দু’বছর কেটে গেল। স্বামীর প্রাপ্য টাকা এখনও হাতে পাইনি।” প্রায় একই ভাবে তাঁদের প্রাপ্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কিছু অর্থ সংগ্রাহক এবং নথিভুক্তির কাছে নিযুক্ত কর্মীরাও। তাঁরা কাজে উৎসাহ হারাচ্ছেন বলেও জানান।