এখন ভাড়াবাড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়া চুঁচুড়ার দমকল কেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল বছরখানেক আগে। প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিলেন এলাকার বহু মানুষ। অবশেষে নতুন ভাবে ওই কেন্দ্র তৈরির জন্য জমি মিলল শহরেরই পাঙ্খাটুলি এলাকায়। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে থাকা ওই জমিতে দমকল কেন্দ্রটি তৈরি করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য যতটা জমির প্রয়োজন, পাঙ্খাটুলিতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে থাকা জমি থেকে তা নেওয়া হবে। জরিপের কাজ চলছে। শীঘ্রই দমকল দফতরের হাতে ওই জমি হস্তান্তর করা হবে। তার পরেই পুরোদমে কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে।” দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, জমি হস্তান্তর হয়ে গেলেই আধুনিক দমকল কেন্দ্র তৈরি করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরে মিত্রবাগান এলাকায় পুরনো একটি বাড়ির একাংশ ভাড়া নিয়ে চলছে দমকল কেন্দ্রটি। কার্যালয় এবং কর্মীদের ঘরগুলির এমনই অবস্থা, যে কোনও সময়ে চাঙর ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব সময়ে আতঙ্কে থাকেন কর্মীরা। বট-অশ্বত্থের শিকড় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে দেওয়ালে-ছাদে। নেই দরজা। জানলা বন্ধ হয় না। বৃষ্টিতে ঘরের ছাদ থেকে জল পড়ে। গাড়িগুলি খোলা আকাশের নীচেই পড়ে থাকে। ফলে, গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়।
এই অবস্থায় ওই দমকল কেন্দ্রের কর্মীরা নতুন ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রশাসনিক মহলে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। বিভিন্ন জায়গায় জমির খোঁজও শুরু হয়। এ কথা জানতে পেরেই হুগলি-চুঁচড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আশিস সেনের নেতৃত্বে প্রতিবাদে নামেন এলাকার বাসিন্দারা। শহরের চারপাশে ব্যান্ডেল চার্চ, ইমামবাড়া, হংসেশ্বরী মন্দির ছাড়াও জেলাশাসকের দফতর-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন থাকায় তাঁরা শহরের মধ্যেই কোথাও ওই কেন্দ্র গড়ার দাবি তোলেন। এ জন্য সই সংগ্রহও চলে। জেলাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ হয়। স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। এর পরেই শহরের মধ্যে জমির খোঁজ শুরু হয়।
চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদার বলেন, “দমকলকর্মীদের দুর্দশা এবং শহরবাসীর দাবির কথা মাথায় রেখে পাঙ্খাটুলিতে জমি দেখা হয়েছে।” শহরের মধ্যেই নতুন ভবনে তাঁরা কাজ করতে পারবেন জেনে খুশি ওই কেন্দ্রের দমকলকর্মীরা। খুশি সাধারণ মানুষও। তাঁদের মধ্যে কেওটার ননীগোপাল দে বলেন, “দমকল কেন্দ্রটি স্থানান্তরের খবরে যেমন মর্মাহত হয়েছিলাম, তেমনই খুশি হয়েছি শহরের বুকেই নতুন কেন্দ্র হবে জেনে।” একই বক্তব্য আরও অনেকের।