গুড়িয়ার ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’র সই তাঁর নয়, আদালতে দাঁড়িয়ে জানালেন গুড়াপের ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ হোমের তৎকালীন চিকিৎসক কাঞ্চন মণ্ডল। গুড়িয়া হত্যা মামলায় চুঁচুড়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফার্স্ট কোর্ট) অরূপ বসুর এজলাসে শুক্রবার সাক্ষ্য দেন ওই চিকিৎসক। কাঞ্চনবাবুর আরও দাবি, চিকিৎসা করানোর সময় হোমের একাধিক মহিলা তাঁকে বলেছিলেন, হোম এবং বাইরের লোকজন এসে তাঁদের উপর অত্যাচার করে।
ঠিক দু’বছর আগে গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি এলাকার বেসরকারি ওই হোমের পাঁচিলের গায়ে, পুকুরের ধার থেকে মাটি খুড়ে গুড়িয়ার পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন বছর বত্রিশের ওই যুবতীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়। ওই ঘটনায় হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার এবং তার ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষ-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে বর্ধমানের জামালপুরে দামোদরের চর থেকে আরও কয়েক জন আবাসিকের মৃতদেহ এবং কঙ্কাল উদ্ধার হয়। অভিযোগ, প্রতি ক্ষেত্রেই অত্যাচারিত হয়ে ওই আবাসিকদের মৃত্যু হয়। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে মৃতদেহ অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে গিয়ে দামোদরের চরে পুঁতে দেওয়া হয়। অভিযোগ, শ্যামল হোমের কেউ না হলেও সেই হোমে ছড়ি ঘোরাত। এমনকি, অত্যাচারের প্রমাণ লোপাটের জন্য মৃতদেহ সরিয়ে ফেলার বন্দোবস্ত উদয়চাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সে-ই করত।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিবিআই। ঘটনার পরেই গুড়াপের ওই বেসরকারি হোমটি সিল করে দেয় রাজ্য সরকার। আবাসিকদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের বিভিন্ন হোমে। সম্প্রতি চুঁচুড়া আদালতে গুড়িয়া হত্যা মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিতে এসে হোমের তৎকালীন সুপার বুলবুল চৌধুরী জানিয়েছিলেন, উদয়চাঁদ এবং শ্যামল আবাসিক মেয়েদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাত।
অত্যাচার চালিয়েই গুড়িয়াকে মেরে ফেলে দেহ পুঁতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, স্বাভাবিক ভাবে ওই আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে, এই মর্মে চুঁচুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দাখিল করেন হোম কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ হোমের চিকিৎসক কাঞ্চনবাবুর সই রয়েছে। ‘চিকিৎসকের শংসাপত্র’ দেখে ওই মৃত্যু নিয়ে কোনওরকম সন্দেহ প্রকাশ করেনি প্রশাসন। পরে কাঞ্চনবাবু তদন্তকারী অফিসারদের কাছে দাবি করেন, ওই শংসাপত্রের সই আদৌ তাঁর নয়। মামলার সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী জানান, এ দিন সাক্ষ্য দিতে এসেও একই কথা বলেন কাঞ্চনবাবু। এ দিন ওই চিকিৎসক আদালতকে জানান, তাঁর সই জাল করে ‘মৃত্যুর শংসাপত্র’ তৈরি করেছিলেন হোমের লোকজন। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানতেন না। শুধু তাই নয়, চিকিৎসা করানোর সময় বিভিন্ন আবাসিক মহিলার থেকে তিনি জেনেছিলেন যে, হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ শ্যামল ঘোষ তাঁদের উপর অত্যাচার করত। এজলাসে দাঁড়িয়ে ওই দু’জনকে সনাক্তও করেন কাঞ্চনবাবু। ওই চিকিৎসক ছাড়াও এ দিন আদালতে স্বাক্ষ্য দেন রতন মাণ্ডি নামে এক পুলিশকর্মী।