নতুন পদ্ধতিতে চষা জমি। —নিজস্ব চিত্র।
ধান চাষে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্পন্ন চাষিদের কাছ প্রথমে তেমন সাড়া পাওয়া বা তাঁদের আস্থা অর্জন করা যাচ্ছিল না। অথচ তুলনায় ছোট চাষিদের হাত ধরেই ধান চাষে আধুনিক ড্রাম সিডার পদ্ধতির প্রয়োগে অনেকটাই সফল আরামবাগ মহকুমা কৃষি দফতর।
ছোট চাষিদের ক্ষেত্রে ড্রাম সিডার পদ্ধতির সাফল্য দেখে এখন সম্পন্ন চাষিরাও ওই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন। এমনকী বোরেচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী এই পদ্ধতি আমন চাষেও প্রয়োগ করছেন তাঁরা।
মহকুমা কৃষি আধিকারিক অশ্বিনী কুম্ভকার বলেন, “মহকুমার ছটি ব্লকে ৩০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে বোরো চাষ হচ্ছে। আমন চাষের ক্ষেত্রে এটা প্রায় ১৫ হেক্টর।” মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ২০০৪ সাল থেকে সম্পন্ন চাষিদের মাধ্যমে লাগাতার চেষ্টা করা হচ্ছিল ড্রাম সিডার পদ্ধতি প্রয়োগের। কিন্তু সেই সময়ে সূর্যমুখী চাষে বিপর্যয় হওয়ার পর চাষে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ নিয়ে চাষিদের ব্যাপক অনীহা দেখা দেয়। এমনকী মাঠে কৃষি দফতরের আধিকারিক বা কর্মীদের দেখতে পেলে তাঁদের তাড়া করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তখনকার পরিস্থিতির কারণে চাষিরা কৃষি দফতরের উপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ছোট চাষিদের হাত ধরেই ড্রাম সিডার পদ্ধতির সাফল্য এল। তবে এ জন্য যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছিলেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। যাঁরা নিজের হাতে চাষ করেন। চাষ ছাড়া তাঁদের অন্য বিকল্প নেই, এমন চাষিদের কৃষি দফতরের আধিকারিকার বুঝিয়েছিলেন নতুন পদ্ধিতের প্রয়োগে লোকসান হলে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ২০০৭ সালে প্রথম আরামবাগের কাপসিট গ্রামের দুই চাষি ৭ বিঘা জমিতে ড্রাম সিডার পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘায় ১৬ মনের জায়গায় প্রায় ২৫ মন করে ধান পান। সেই উদাহরণই নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ নিয়ে ক্রমশ সাড়া জাগিয়েছে চাষিদের মধ্যে।
ড্রামসিডার পদ্ধতি কেমন?
নতুন এই পদ্ধতিতে সরাসরি যন্ত্রের সাহায্যে কাদা করা জমিতে ধান বীজ ফেলে দেওয়া হয়। আলাদা করে বীজতলা তৈরি করে ধান রোপণের ঝামেলা নেই। এর সুবিধা? কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এতে গাছ সমানভাবে বাড়ে। প্রচুর পাশকাটি হয় এবং সেই পাশকাটির প্রত্যেকটি থেকে শিষ হয় বীজ থেকে সরাসরি গাছ বাড়তে দেওয়ায় রোগপোকার আক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। শিষের দৈর্ঘ্য এবং দানার সংখ্যা বাড়ে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য হল, খরচও বিঘা প্রতি কমে যায়। আরামবাগের মইগ্রামের রাধারমণ হাটি গত ৪ বছর ধরে বোরো এবং আমনে ড্রাম সিডার পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তিনি জানান, চিরাচরিত প্রথায় বীজ ফেলা এবং তারপর বীজ বড় করে বিঘা পিছু রোপণে ১০ জন শ্রমিকের মজুরি বাবদ ১৫০ টাকা করে ১৫০০ টাকা খরচ হয়। ড্রাম সিডারে যন্ত্রের সাহায্যে বীজ ফেলতে খরচ বিঘাপ্রতি মাত্র ১০০ টাকা। বিঘা পিছু বীজও লাগে কম। বোরোয় ১০ কেজির বদলে মাত্র ৫ কেজি বীজ লাগে।
রাধারমণবাবু বলেন, “বোরো চাষে বিঘায় সার-সেচ এবং বীজ রোপণ থেকে মরাইয়ে ধান তোলা পর্যন্ত বিঘা পিছু খরচ হয় ৮ হাজার টাকার মতো। লাভ পাচ্ছি বিঘা পিছু ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা।’’
বাদলকোনা গ্রামের সম্পন্ন চাষী বিশ্বরূপ কোনার বলেন, “নতুন পদ্ধতি নিয়ে কৃষি দফতরের অফিসাররা বললেও প্রথমে তাতে কান দিইনি। কিন্তু পাশের মইগ্রামে রাধারমন হাটির চাষে ফলন দেখে নতুন পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছি।” শুধু বিশ্বরূপবাবুই নন, ড্রাম সিডারের সাফল্যে আগের চেয়ে চাষে বেশি লাভের মুখ দেখেছেন তিরোল, খানাকুল, পুড়শুড়া, গোঘাটের চাষিরাও।
গত চার বছরে ড্রাম সিড
পদ্ধতিতে বোরোচাষের হিসাব
• ২০১০ -- ৪০ হেক্টর
• ২০১১--৫০ হেক্টর
• ২০১২--২৫০ হেক্টর
• ২০১৩--৩০০ হেক্টর