চটকল মালিকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নর্থব্রুকের ঘটনার পর চটকলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা-গন্ডা নিয়ে এবার কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করল রাজ্যের শ্রমদফতর। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায়ে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হল ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া ও ডালহৌসি চটকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০১:৫০
Share:

নর্থব্রুকের ঘটনার পর চটকলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা-গন্ডা নিয়ে এবার কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করল রাজ্যের শ্রমদফতর। শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা আদায়ে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হল ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া ও ডালহৌসি চটকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

হুগলি শিল্পাঞ্চলে ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া, ডালহৌসি চটকলের অবসরপ্রাপ্ত ছয় শ্রমিকের বকেয়া গ্র্যাচুইটি দীর্ঘদিন ধরে মিল কর্তৃপক্ষ দেননি। বহু আবেদনে সাড়া না পাননি তাঁরা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে একজন শ্রমিক মারাও গিয়েছেন। ওইসব পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ। বকেয়া না পেয়ে অনেকেই অভাবে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারছেন না। কেউ রোগভোগে অসুস্থ, কেউ বা অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। চন্দননগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন।

অবসরপ্রাপ্ত জুটমিল শ্রমিক মঞ্চ নামে ওই সংস্থার তরফে চন্দননগর শ্রম দফতরে বিধিবদ্ধ আবেদন করা হয় শ্রমিকদের হয়ে। সেই বিষয়টিকে মান্যতা দিয়ে চন্দননগর মহকুমা দফতরে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়। নোটিস জারি করা হয় ওই দুই চটকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তাতেও প্রাথমিকভাবে তারা সাড়া দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ওই দুই চটকল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চন্দননগর মহকুমা দফতর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। চন্দননগরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামীর দফতর থেকে চিঠি দিয়ে ওই সংস্থাকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই দুই মিল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। মহকুমাশাসকের দফতরে প্রতিনিধি পাঠিয়ে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।

Advertisement

ভিক্টোরিয়া জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক হাকিম মিঞা অবসর নেন ২০০৮ সালে। সেই থেকেই তিনি পাওনার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কোনও সুরাহা হয়নি। রামবীর সাউ নামে অপর এক শ্রমিক অবসর নিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। বার বার আবেদন করে টাকা পাননি তিনিও। টাকা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন তিনি। একই পরিস্থিতি ভারতচন্দ্র মান্না, শ্যামসুন্দর দাস, আপ্পা রাও এবং মহেন্দ্র দাসদের। দীর্ঘদিন জুটমিলে কাজ করেও প্রাপ্য থেকে তাঁরা বঞ্চিত।

শ্রমিক মঞ্চের তরফে প্রতিটি অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ধরে ধরে সাটিফিকেট কেসে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বস্তুত অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেখাপড়া না জানায় কী ভাবে বকেয়ার জন্য আবেদন করতে হবে তা তাঁরা জানেন না। আবার বহুক্ষেত্রে তাঁরা সচেতন নয়। জুটমিলের বড়কর্তাদের কাছে মৌখিক আবেদন করেই মাসের পর মাস পাওনার জন্য হাপিত্যেস করে বসে থাকেন তাঁরা। শ্রমিক মঞ্চ এইসব শ্রমিকদের বিষয়গুলি একত্রিত করেই আবেদন করায় প্রশাসনের পাশাপাশি চটকল কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসে।

চন্দননগর শ্রম দফতরের ডেপুটি লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকেরা যাতে তাঁদের বকেয়া যথাযথভাবে পান তার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন চটকল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা তাঁদের বকেয়া পেয়ে গিয়েছেন।” শ্রমিকদের হয়ে আইনি সহায়তা কেন্দ্রের তরফে মামলা লড়ছেন বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।

তিনি বলেন,“এতদিন চন্দননগর মহকুমাশাসকের দফতরে আবেদন করেও তেমন সাড়া মিলত না। কিন্তু ইদানিং সেখানে কিছু উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে। তার ফলও মিলছে। চটকল কর্তৃপক্ষেরাও বকেয়া মেটাতে আগের তুলনায় এখন কিছুটা হলেও সাড়া দিচ্ছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement