গোটা আরামবাগ মহকুমা জুড়ে যে প্রায় দেড় লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে, সেই তথ্য প্রশাসনের কাছে এসেছিল চার বছর আগে। কিন্তু এত দিনে একটিও ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার করা গেল না। এ নিয়ে খাদ্য সরবরাহ দফতর এবং বিভিন্ন পঞ্চায়েতের মধ্যে চাপান-উতোর চলছেই। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বহুমুখী আঁতাতের জন্যই ওই কাজ শুরু হয়নি।
মহকুমা খাদ্য সরবরাহ দফতরের দাবি, কর্মীর অভাবে এবং নানা জটিলতায় তারা ওই কাজে সে ভাবে হাত দিতে পারেনি ঠিকই, তবে মূলত পঞ্চায়েতগুলির অসহযোগিতাতেই ভুয়ো রেশন কার্ডের একটিও এখনও উদ্ধার করা যায়নি। জন্মের পর রেশন কার্ডের জন্য পঞ্চায়েত তদ্বির করে। কিন্তু মৃত্যুর পর কার্ড বাতিলের সুপারিশ আসে না। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে বা কেউ অন্যত্র বসবাস করলে সে খবরও পাওয়া যায় না। বিভিন্ন পঞ্চায়েতের পাল্টা দাবি, রেশন কার্ড বাতিলের জন্য খাদ্য দফতরের তরফে কোনও নির্দেশ মেলে না।
খাদ্য দফতরের দাবি
জন্মের পর রেশন কার্ডের জন্য পঞ্চায়েত তদ্বির করে।
কিন্তু মৃত্যুর পর কার্ড বাতিলের সুপারিশ আসে না। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে বা
কেউ অন্যত্র বসবাস করলে সে খবরও পাওয়া যায় না।
পঞ্চায়েতের বক্তব্য
রেশন কার্ড বাতিলের জন্য খাদ্য দফতরের তরফে কোনও নির্দেশ মেলে না।
দু’পক্ষের এই চাপান-উতোরে ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারের প্রক্রিয়া থমকেই রয়েছে আরামবাগ মহকুমায়। মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে খাদ্য সরবরাহ দফতরের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” মহকুমা রেশন-ডিলার সংগঠনের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ মণ্ডল দাবি করেছেন, বছর খানেক ধরে প্রতি মাসে তাঁরা খাদ্য সরবরাহ দফতরে গিয়ে মৃত্যু কিংবা মেয়েদের বিয়ে ইত্যাদি যে সব ক্ষেত্রে কার্ড বাতিল করা হয়, তা জানান। তবে, তার আগের ভুয়ো রেশন কার্ডের পরিণতি তাঁর অজানা।
২০১১ সালের গোড়ায় রাজ্য জুড়ে ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। ওই বছর মার্চ মাস নাগাদ মহকুমা খাদ্য সরবরাহ দফতর দেখে সেখানকার ৬টি ব্লকে মোট রেশন কার্ডের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৩২ হাজার ২২৬। অথচ, জনসংখ্যা ১১ লক্ষ ৮৫ হাজার। ওই বছর জুন মাস থেকে তৎকালীন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারের পথ খুঁজতে সংশ্লিষ্ট বিডিও, বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি এবং খাদ্য সরবরাহ দফতরের পরিদর্শকদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ার নির্দেশ দেন। সেই কমিটি কী ভাবে কাজ করবে তা চুড়ান্ত করতে বৈঠকও ডাকেন কয়েকবার। কিন্তু অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েতে সদস্যেরা গরহাজির থাকায় চুড়ান্ত বৈঠকটাই হয়নি। এর পরে আর কোনও কমিটি বা এ সংক্রান্ত বৈঠক হয়নি বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
চলতি সময়ে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে রেশন কার্ডের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে। নতুন কার্ডের ক্ষেত্রে কোনও গরমিল নেই বলেই খাদ্য দফতরের দাবি। কিন্তু আগের সেই বাড়তি ১ লক্ষ ৪৭ হাজারের বেশি ভুয়ো রেশন কার্ড যেমন ছিল তেমনই রয়ে গিয়েছে।
ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধারে পঞ্চায়েতের অসহযোগিতার অভিযোগ মানতে চাননি অনেক প্রধানই। পুড়শুড়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের হাসিনউদ্দিন হক বলেন, “সহযোগিতা চেয়ে খাদ্য দফতরের কোনও চিঠিই পাইনি। খাদ্য দফতর চিঠি দিক। আমরা সর্বতোভাবে সহযোগিতা করব।” একই আশ্বাস দিয়েছেন আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের প্রধান স্বপন সাধুখাঁ-সহ কয়েক জন প্রধান।
কিছু মানুষের আবার অভিযোগ, ভুয়ো রেশন কার্ডের পিছনে রেশন ডিলারদের সঙ্গে খাদ্য সরবরাহ দফতরের এক শ্রেণির অফিসারদের যোগ রয়েছে। আবার ডিলার-খাদ্য সরবরাহ দফতর এবং পঞ্চায়েত সদস্য ত্রিমুখী যোগসাজশেও ওই সব ভুয়ো রেশন কার্ড হয়েছে। এই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে না দিয়ে খাদ্য সরবরাহ দফতর মেনে নিয়েছে, কিছু অসাধু ডিলার এবং অসাধু কর্মীদের যোগসাজশে ভুয়ো কার্ডের নজির রয়েছে। তবে, সাধারণ নাগরিকও পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পরে কার্ড বাতিল করতে তেমন উদ্যোগী হচ্ছেন না বলে জানাচ্ছে খাদ্য দফতর।