বছর কয়েক আগেও ছবিটা অন্যরকম ছিল।
ভরা মাঠে জায়গা না পেয়ে গাছে চড়ে বসতেন সমর্থকেরা। প্রিয় দল জিতলে বাজি ফাটাতেন। আর পয়েন্ট নষ্ট করলে গোমড়া মুখে বাড়ি ফিরতেন। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান নয়, এই ছবি দেখা যেত ডোমজুড় থানা লিগে গড়বাগান, মাকড়দহ ইউনিয়ন, কাটলিয়া কিশোর সঙ্ঘের মত দলের খেলায়। দলবদল থেকেই চড়ত উত্তেজনার পারদ। সে সব অবশ্য এখন অতীত। মারকাটারি লড়াই দূর অস্ত, টাকার অভাবে গত মরসুমে লিগ বন্ধ ছিল। প্রাথমিক ক্রীড়াসূচি তৈরি হলেও এ বারের লিগ কবে হবে, তা এখনও পরিস্কার নয়।
হাওড়া জেলা স্পোটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “মাঠ পাওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে। গত মরসুমে সময়ের অভাবে লিগ করা যায়নি। তবে এ বার লিগ হবে।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থা অনুমোদিত ডোমজুড় থানা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই লিগ শুরু হয় ১৯৫৫ সালে। এখানে খেলেই বড় হয়েছেন জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিকাশ পাঁজি। মূলত ডোমজুড় থানা এলাকার ক্লাবগুলিকে নিয়ে সুপার ডিভিশন এবং প্রথম ডিভিশনের খেলা হয়। বর্তমানে ২০টি দল অংশগ্রহণ করে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত খেলা হয়। প্রথম ডিভিশনের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স দল সুপার ডিভিশনে ওঠে। সুপার ডিভিশনের শেষ দু’টি দল প্রথম ডিভিশনে নামে। অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, আর্থিক সমস্যা এবং মাঠ না পাওয়ায় ২০১২-’১৩ মরসুমের লিগ শেষ হয়েছে চলতি বছরের গোড়ায়। ফলে ’১৩-’১৪ মরসুমের খেলা করাই যায়নি।
এত জনপ্রিয় লিগের এই হাল কেন?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে নানা মত। উদ্যোক্তা সংস্থার ফুটবল সম্পাদক অনুপ দাস ঘোষের দাবি, “একটি ম্যাচ করতে এখন প্রায় ২০০০ টাকা লাগে। পুরষ্কার বাবদ খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর্থিক সাহায্যর জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেও লাভ হয়নি। ক্লাবের নথিভুক্তিকরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ এবং ফুটবলপ্রেমিদের অনুদানে লিগ চলে।” তবে তাঁর আশ্বাস, আগামী নভেম্বরের শেষে এ বারের লিগ শুরু হবে। গ্রুপ বিন্যাস এবং প্রাথমিক ক্রীড়াসূচি তৈরি। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা কোলড়া বীনাপানি ক্লাবের কর্তা মলয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কিছু মাঠ খেলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটি মাঠে শীতকাল জুড়ে শুধু মেলাই হয়। এখন ভাল মাঠ বলতে মাকড়দহ ইউনিয়ন, অঙ্কুরহাটি পিএজে স্পোর্টিং ক্লাব। কোনও কারণে এগুলি পাওয়া না গেলে খেলা স্থগিত রাখতে হয়।’’
তবে লিগ ভালমতো চালাতে সংগঠকদের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্লাবের কর্তার বক্তব্য, লিগ চালানোর মতো সাংগঠনিক দক্ষতা কর্তাদের নেই। ডোমজুড় ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সুকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘স্থা্নীয় লোকজন এখনও মাঠে যান। কিন্তু প্রচার না থাকলে মাঠ ভরবে কী করে?’’ তাঁর দাবি, ঝাঁপড়দহ ডিউক স্কুলের মাঠে ডোমজুড় গোল্ড কাপ দেখতে টিকিট কেটে লোক আসে। সেখানে থানা লিগের অনেক দলই খেলে। পাবর্তীপুর মিলন সঙ্ঘের কর্তা, ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের আবার আক্ষেপ, ‘‘নতুন প্রজন্মের ছেলেরা ফুটবল মাঠে কম আসছে। খেলার মান অনেক নেমে গিয়েছে। ক্লাবগুলিরও উত্সাহ কমেছে।’’