Blood donation

১২৫ কিমি উজিয়ে এসে মুমূর্ষুকে রক্তদান যুবকের

পড়া ফেলে মেদিনীপুর শহর থেকে উজিয়ে হাওড়ার ফুলেশ্বরে এসে শনিবার রক্তদান করে গেলেন সৈকত প্রামাণিক নামে ওই যুবক। দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ ‘এবি-নেগেটিভ’।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৯
Share:

রক্তদান করছেন সৈকত প্রামাণিক। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি ছাত্র। শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু, যখন শুনলেন হন্যে হয়ে ঘুরেও ১২৫ কিলোমিটার দূরের এক মহিলার জন্য তাঁর বাড়ির লোকেরা রক্ত জোগাড় করতে পারছেন না, তখন দু’বার ভাবেননি।

Advertisement

পড়া ফেলে মেদিনীপুর শহর থেকে উজিয়ে হাওড়ার ফুলেশ্বরে এসে শনিবার রক্তদান করে গেলেন সৈকত প্রামাণিক নামে ওই যুবক। দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ ‘এবি-নেগেটিভ’।

সৈকতের দানে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন অপর্ণা মণ্ডল নামে ওই মহিলার বাড়ির লোকেরা। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত লোকজন এবং চিকিৎসকেরা বলছেন, এমনিতেই নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সঙ্কট থাকে। তার উপরে করোনা পরিস্থিতিতে ব্লাডব্যাঙ্কের ভাঁড়ার আরও শুকিয়ে গিয়েছে। রক্তদান শিবিরের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। যে সব শিবির হচ্ছে, সেখানে রক্তদাতা আসছেন অনেক কম। রক্তদান আন্দোলনের দীর্ঘদিনের কর্মী ডি আশিস বলেন, ‘‘করোনার ভয়ে অনেক নিয়মিত দাতাও রক্ত দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ওই যুবকের মানসিকতাকে কুর্নিশ। এই ঘটনা রক্তদান আন্দোলনের হাতকে শক্ত করল।’’

Advertisement

উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক মোহন মণ্ডলের স্ত্রী, বছর পঞ্চাশের অপর্ণা স্কুল শিক্ষিকা। বাড়ির লোকেরা জানান, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেকটা কমে যাওয়ায় অপর্ণাকে দিন কয়েক আগে উলুবেড়িয়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, চার ইউনিট রক্ত প্রয়োজন। কোনও রকমে তিন ইউনিট জোগাড় হয়। কিন্তু বুধবার থেকে হাওড়া এবং কলকাতার বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কে ঘুরেও মোহনবাবুরা আর এক ইউনিট রক্ত পাননি।

এই খবর পেয়ে পাঁচলার বাসিন্দা রেজাউল করিম বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ‘পোস্ট’ করেন। সেটি চোখে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক মল্লিকের। সৈকত তাঁর ছাত্র। ফারুক জানতেন, সৈকতের রক্তের গ্রুপ ‘এবি-নেগেটিভ’। তিনি সৈকতকে বিষয়টি জানান। সৈকত অরাজি হননি। শনিবার সকালে সেখান থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রেনে চেপে ফুলেশ্বরে এসে বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে তিনি রক্ত দেন। বিকেলে সেই রক্ত অপর্ণার শরীরে দেওয়া হয়।

অপর্ণার স্বামী বলেন, ‘‘ওই যুবককে অশেষ কৃতজ্ঞতা। রেজাউল করিম, ফারুক মল্লিককেও ধন্যবাদ।’’ ফারুকের কথায়, ‘‘এবি নেগেটিভ সচরাচর মেলে না বলে জানি। পরিস্থিতি বুঝেই সৈকতকে বলি। ও মানবিকতার সুন্দর নজির রাখল।’’

সৈকতের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় বিএড কলেজের ছাত্র। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলছে। পড়াশোনার সুবিধার জন্য মেদিনীপুর শহরে মেসে থাকেন। তিনি জানান, শুক্রবার পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরে ফারুক তাঁকে বিষয়টি জানান। শনিবার পরীক্ষা ছিল না। তাই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন। এক দিন পড়ার ক্ষতি হলেও তা নিয়ে তিনি ভাবিত নন।

তাঁর এই মানসিকতাই প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘এবি-নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সঙ্কট বেশি। আমরা বারবার প্রচার চালাচ্ছি, রক্তদান শিবির করার জন্য। ওই যুবককে ধন্যবাদ।’’ ডি আশিসের কথায়, ‘‘ওই যুবক অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যেতে পারতেন ওই মহিলা তাঁর অপরিচিত। কিন্তু তা করেননি। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, এটা মানুষ হিসেবে তাঁর দায়বদ্ধতার প্রকাশ। যে দাতারা ভয় পেয়ে রক্ত দিচ্ছেন না, সৈকতবাবুর অঙ্গীকার তাঁদের কাছে শিক্ষনীয়।’’

সৈকত অবশ্য অতশত ভাবছেন না। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, ‘‘আমার রক্তে যদি এক জনের প্রাণ বাঁচে, সেটাই অনেক।’’

তথ্য সহায়তা: প্রকাশ পাল

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement