প্রতীকী ছবি।
বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের নামে দুর্নীতি রুখতে আজ মঙ্গলবার হাওড়া জেলা জুড়ে উপভোক্তাদের নিয়ে কর্মশালা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন থাকে। ফলে টাকা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কাটমানি, দুর্নীতি ও মানুষের বিভ্রান্তির সুযোগ বেশি। এই ধরনের অব্যবস্থা রুখতেই রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ব্লক প্রশাসনকে এই কর্মশালার আয়োজন করতে বলেছে।
কাটমানি নিয়ে এ পর্যন্ত যত অভিযোগ উঠেছে, তার সিংহভাগ জুড়ে আছে বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প। এই প্রকল্পে গ্রামের গরিব মানুষদের ১ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। অভিযোগ এই টাকার একটা অংশ নেতাদের দিতে বাধ্য হন উপভোক্তারা। এই ব্যবস্থার অবসান ঘটাতেই বিডিওরা উপভোক্তাদের নিয়ে এই জেলার ১৪টি ব্লকেই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এক একটি কর্মশালায় যোগ দেবেন প্রায় ১৫০০ উপভোক্তা। সেখানে উপস্থিত থাকবেন উপভোক্তারা। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপভোক্তাকে এই বিষয়ে আগাম খবর দেওয়া হয়েছে।
কী হবে এই কর্মশালায়?
উপভোক্তারা প্রকল্পের টাকা কীভাবে হাতে পাবেন, কীভাবে ওই টাকা খরচ করে নিজের বাড়ি বানাতে হবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে এই কর্মশালায়। বিডিও জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কর্মশালার পরই উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা। উপভোক্তাদের এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল করা হবে।
জাতীয় সামাজিক ও আর্থিক সমীক্ষার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি গরিব মানুষের তালিকা থেকেই উপভোক্তাদের নির্বাচন করা হয়। ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা উপভোক্তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। ব্লক প্রশাসন সবুজ সংকেত দিলেই উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা পড়ে।
টাকা দেওয়া হয় তিনটি কিস্তিতে। এ দিনের কর্মশালায় বিডিও এবং আধিকারিকরা উপভোক্তাদের হাতেকলমে কিস্তির বিষয়টি বুঝিয়ে দেবেন। এই প্রকল্পে টাকা পেতে হলে উপভোক্তাদের নিজেদের কোনও টাকা দিতে হয় না, তাও বুঝিয়ে দেওয়া হবে উপভোক্তাদের।
পুরসভা এলাকায় ‘সবার জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে উপভোক্তাদের ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তবে এই প্রকল্পে উপভোক্তাকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানান, পুরসভার উপভোক্তাদের টাকা দিতে হলেও পঞ্চায়েতে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে এই নিয়ম নেই। কিন্তু পঞ্চায়েত এলাকাতেও পুরসভার নজির টেনে উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নেন পঞ্চায়েত স্তরের এক শ্রেণির নেতা কর্মীরা। এর ফলে উপভোক্তা সময়ে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে পারেন না। জেলা প্রশাসনের ওই কর্তা আরও জানান, কর্মশালায় কাটমানি না দেওয়ার কথা যেমন বলা হবে, তেমনই বরাদ্দ টাকা নিয়ম মেনে খরচ না করা হলে উপভোক্তা যে আইনি সমস্যায় পড়বেন তাও জানানো হবে। পাশাপাশি টাকা খরচের নিয়মের ছাপানো বইও তুলে দেওয়া হবে উপভোক্তার হাতে। এই বইতে দু’জন সরকারি আধিকারিকের নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে। বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়লে উপভোক্তারা সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।