Wellington

শ্রমিক অসন্তোষ, বন্ধ ওয়েলিংটন জুটমিল

শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিয়ম-নীতি মানছেন না। ২০০০ লোকের কাজ করার কথা। অথচ, ১২০০-১৩০০ লোক কাজ করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০৫
Share:

মিলের গেটে নোটিস দেখছেন শ্রমিকেরা। —নিজস্ব চিত্র

এক সহকর্মীকে ‘অনৈতিক’ ভাবে বের করে দেওয়ার (গেট-বাহার) প্রতিবাদে সোমবার সকালে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিলের শ্রমিকেরা। তৎক্ষণাৎ ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করে দিলেন মিল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফা সিদ্ধান্তের অভিযোগে শ্রমিকেরা জিটি রোড অবরোধ করেন।

Advertisement

সমস্যা সমাধানে শ্রীরামপুর শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হলেও কর্তৃপক্ষ গরহাজির থাকায় লাভ হয়নি। আজ, মঙ্গলবার কলকাতায় রাজ্যের অতিরিক্ত শ্রম-কমিশনারের দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা।

শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ নিয়ম-নীতি মানছেন না। ২০০০ লোকের কাজ করার কথা। অথচ, ১২০০-১৩০০ লোক কাজ করছেন। বাকিরা কাজ পাচ্ছেন না। বদলে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। কাউকে স্থায়ী করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের ইএসআই, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা পড়ছে না।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ছি‌ল। এর মধ্যেই মিলের ‘প্রিপেয়ারিং’ বিভাগের শ্রমিক তথা এআইটিইউসি নেতা ভোলানাথ কর্মকারকে সোমবার থেকে ‘গেট-বাহার’-এর নির্দেশ দেওয়া হয়। শ্রমিকদের দাবি, সংগঠনের এক নেত্রী মারা যাওয়ায় রবিবার বিভাগের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের অনুমতি নিয়েই ভোলানাথ কিছুক্ষণের জন্যা প্রয়াত নেত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই ‘অপরাধে’ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় শ্রমিকেরা খেপে যান। সোমবার সকাল ৬টার শিফ্‌টে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। এর পরেই কারখানা বন্ধের ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

মিলের পার্সোনেল ম্যানেজার মনীশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা হাতে লেখা নোটিসে কর্তৃপক্ষের দাবি, আর্থিক সঙ্কট সত্বেও উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে যত বেশি সম্ভব শ্রমিক নিয়ে। কিন্তু শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট মাত্রায় উৎপাদন করছেন না। উপরন্তু অকারণে উচ্চপদস্থ আধিকারিককে ঘেরাও, গোলমাল করে তাঁরা সমস্যা তৈরি করছেন।

ওই নোটিস দেখে শ্রমিকরা তেতে ওঠেন। সকাল ৮টা নাগাদ রাস্তা অবরোধ করা হয়। এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, সিটু— তিন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই শামিল হন। মিলের এক শীর্ষকর্তাকে সরানোর দাবি ওঠে। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ চলে। দুপুরে ভোলানাথ এবং আরও ন’জন শ্রমিককে ‘গেট বাহার’-এর নির্দেশ দেন মালিকপক্ষ। কারণ হিসেবে জানানো হয়, তাঁরা সহকর্মীদের কাজ না করতে জোর করেছেন। কাঁচামাল এবং উৎপাদিত সামগ্রীর গাড়ি ঢোকা-বেরনোর ক্ষেত্রে সমস্যার অভিযোগও তোলা হয় মালিকপক্ষের তরফে।

সমস্যা সমাধানে দুপুরে শ্রীরামপুরের উপ-শ্রম কমিশনার পার্থসারথি চক্রবর্তী মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় ডাকেন। মালিকপক্ষের অনুপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক না হলেও শ্রমিক নেতারা তাঁদের বক্তব্য পার্থবাবুকে জানান। তাঁদের অভিযোগ, ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করাতেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এআইটিইউসি নেতা প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ যা খুশি তা-ই করছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে ভৃত্যের মতো আচরণ আমরা মানব না।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সম্প্রতি কর্তব্যরত অবস্থায় ট্রাকের ধাক্কায় মিলের এক দারোয়ান মারা যান। কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার রিপোর্ট দিতে চাননি। যাতে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়। আমাদের বিক্ষোভে শেষ পর্যন্ত দুর্ঘট‌নার রিপোর্ট তাঁরা দেন।’’

শ্রমিক-নেতাদের দাবি, গত ২ ডিসেম্বর শ্রম দফতরে বৈঠক সিদ্ধান্ত হয়, পরের সাত দিনের মধ্যে শ্রমিকদের ইএসআইয়ের টাকা ওই দফতরে জমা দেবেন মিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও তা করা হয়নি। অবিলম্বে মিল খোলা, ‘গেট-বাহার’ করা শ্রমিকদের কাজে ফেরানো, ইএসআইয়ের সুবিধা, পিএফের টাকা জমা দেওয়ার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement