Coronavirus

কত দূর, আর কত দূর...

মঙ্গলবার সকালে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়া এই শ্রমিকদের দেখা মিলল উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় মুম্বই রোডে।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ০৭:০১
Share:

হায়দরাবাদ থেকে বীরভূমের পথে মুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবার। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়ার মুম্বই রোডে। —নিজস্ব িচত্র

এক রকম যুদ্ধই বটে! পেটের তাগিদে টানা ১৫ দিন ধরে হেঁটে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার পার হওয়া তো মুখের কথা নয়! আর সেটাই করছেন বীরভূমের মহম্মদবাজারের দম্পতি মুরাফ হোসেন ও সুরামনি। সঙ্গী তাঁদের বছর পাঁচেকের মেয়ে ফুলমনি আর এক পড়শি।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়া এই শ্রমিকদের দেখা মিলল উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় মুম্বই রোডে। রাস্তায় বসে শেষ সম্বল চিঁড়ে আর বিস্কুট সুরামনি খাইয়ে দিচ্ছিলেন মেয়েকে। রাস্তার ধারের কল থেকে জল খেতে খেতে মুরাফ বলছিলেন তাঁদের গত ১৫ দিনের হাঁটার কথা।

লকডাউনের প্রথম পর্বে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে হায়দরাবাদেই ছিলেন একটি পাউডার তৈরির কারখানার কর্মী মুরাফ। কারখানার মালিক কোনও সাহায্য করেননি। জমানো টাকা দিয়েই কোনওক্রমে সংসার চলছিল। দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিকেও ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত পয়সা ফুরলো। ভিন রাজ্যে এই পরিস্থিতিতে কেউ ধারে জিনিস দিতে চাইলেন না। তখনই হোসেন দম্পতি ঠিক করেন, এ বার বাড়ি ফিরতেই হবে।

Advertisement

গত ২৮ এপ্রিল হায়দরাবাদ থেকে একবস্ত্রে স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন মুরাফ। সঙ্গে আসেন পড়শি সালেমাও। ঠিক করেন, রাস্তা দিয়েই হাঁটবেন তাঁরা। তারপর থেকে টানা হেঁটেই চলেছেন। রাতে রাস্তার ধারেই গা এলিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন কোনওক্রমে। কখনও সাহায্য পেয়েছেন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। কখনও আবার খালি পেটেই হেঁটেছেন।

মাথার উপর চড়া রোদে বিধ্বস্ত হয়ে মঙ্গলবার মুম্বই রোডের ধারে বসে পড়েছিলেন মুরাফরা। বলেন, ‘‘মহম্মদবাজারে গেলে রেশনটা পাব। সেটা দিয়ে আপাতত চলে যাবে। না খেয়ে মরতে হবে না। ’’ ১৫০০ কিলোমিটারের হিসাব অবশ্য রাখেন না তিনি। শুধু বলেন, ‘‘এত হিসেব করে হাঁটিনি। শুধু ভেবেছি, বাড়ি পৌঁছতে হবে।’’ রাস্তায় পুলিশ ধরেনি? সুরামনির জবাব, ‘‘ধরেছিল। কোলে বাচ্চা দেখে বেশি কিছু বলেনি।’’

সরকারের তরফে তো ট্রেনে করে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাতে নাম লেখাননি কেন? মুরাফ বলেন, ‘‘যে টাকা আছে, তাতে সেটাও শেষ হয়ে যাবে। আর হেঁটে তার আগে বাড়িও পৌঁছে যাব।’’

কিন্তু এখনও তো প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের মতো পথ বাকি!

মেয়েকে কোলে নিয়ে ফের হাঁটতে শুরু করে সুরামনির জবাব, ‘‘এত পথ যখন পেরিয়ে আসতে পেরেছি, ওটাও পারব। কিন্তু বাড়ি ফিরতে হবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement