বন্ধ করা হয়েছে পার্কটি।
গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সিঙ্গুরের ইকো-পার্কে ছটফট করছিলেন এক মহিলা।
বুধবার সাতসকালে পার্কের কর্মীদের থেকে খবর পেয়ে তাঁকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। আর এই খুনের ঘটনার জেরে আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য পার্কটি বন্ধ করে দিল প্রশাসন। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই পার্কে অসামাজিক কাজকর্ম নিয়ে আপত্তি তুলছিলেন গ্রামবাসী।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম অঞ্জু মহাপাত্র (৩৮)। হাসপাতালে এটুকুই একটি কাগজে তিনি লিখতে পেরেছেন। এ ছাড়া নিহতের সম্পর্কে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আর কোনও তথ্য মেলেনি। কে বা কারা কেন তাঁকে খুন করল, তার উত্তর খোঁজা হচ্ছে। পার্কের তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন রাতপাহারায় ছিলেন। তাঁরাই খবর দেন।
তদন্তকারীদের অনুমান, ছুরি দিয়ে মহিলার গলা কাটা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই সময়ে পার্কটি খোলে না। তা সত্ত্বেও কী ভাবে মহিলা সেখানে এলেন, তা রহস্য। পার্কে কোনও সিসিক্যামেরা না-থাকায় তদন্তে সমস্যা হবে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’ সিঙ্গুরের বিডিও সুমন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই পার্ক নিয়ে শীঘ্রই পঞ্চায়েত এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। পার্কে সিসিক্যামেরা বসানো হবে। আপাতত পার্ক বন্ধ থাকবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৮২ লক্ষ টাকায় বাগডাঙা-ছিনামোড় পঞ্চায়েতের তরফে কাঠকুন্তী খালের পাড়ে বলরামপুর এলাকায় ওই পার্কটি গড়া হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পার্কটির উদ্বোধন করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য ২০ টাকা।
তা সত্ত্বেও এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ ওই মহিলা কী ভাবে পার্কে ঢুকলেন, এটাই প্রশ্ন। পার্কের রাস্তার ধারে জখম অবস্থায় তিনি পড়ে ছিলেন। বাঁশে ঘেরা পার্কের সীমানা-প্রাচীরের অনেক জায়গাই ভেঙে গিয়েছে। সেই ভাঙা জায়গা দিয়ে যে কেউ পার্কে যাতায়াত করতে পারেন। মহিলাও ওই পথ দিয়ে এসেছিলেন কিনা, তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখছেন।
গ্রামবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, চালুর কিছুদিন পর থেকেই পার্কে নানা অসামাজিক এবং আপত্তিকর কাজকর্ম শুরু হয়ে যায়। প্রকাশ্যে মদ্যপানও চলে। পার্কে ঢোকা-বেরনোর নির্দিষ্ট সময় থাকলেও রাত পর্যন্ত ছেলমেয়েদের সেখানে দেখা যেত। গ্রামবাসীরা সে সব বন্ধের দাবি তোলেন। এ জন্য ‘পরিবেশ রক্ষা কমিটি’ও গড়া হয়।
কমিটির তরফে দাবির কথা জানানো হয় পুলিশ, প্রশাসনকে। কমিটির সম্পাদক তাপস পাল বলেন, ‘‘উদ্বোধনের পর থেকেই পার্কে নানা নোংরামি চলে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোন ফল না-মেলায় আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
এ নিয়ে বিডিও কোনও কথা বলতে চাননি।
ওই পার্ক থেকে যা আয় হয়, তা পঞ্চায়েতের তহবিলেই যায়। এ দিনের খুন বা গ্রামবাসীদের অভিযোগ নিয়ে প্রধান ছায়া দে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে’’, বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।