Dengue

ফের জ্বরে মহিলা মৃত বৈদ্যবাটিতে

পরিবার সূত্রে খবর, গত ২৭ অক্টোবর  থেকে জ্বরে ভুগছিলেন শ্রেয়সীদেবী। পরের দিন স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানো হয়। গত মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজারের কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় শ্রেয়সীদেবীকে। রক্ত পরীক্ষায় ‘এনএস ১ পজিটিভ’ রিপোর্ট মেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বৈদ্যবাটি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

মৃত: শ্রেয়সী বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বৈদ্যবাটি পুর-এলাকায় ফের জ্বরে আক্রান্তের মৃত্যু হল এক মহিলার। মৃত শ্রেয়সী বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৯) পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিনপার্ক সরকারপাড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার ভোরে কলকাতার শিশুমঙ্গল হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের পরিজনদের দাবি, তাঁর ডেঙ্গি হয়েছিল। পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য ডেঙ্গির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

পরিবার সূত্রে খবর, গত ২৭ অক্টোবর থেকে জ্বরে ভুগছিলেন শ্রেয়সীদেবী। পরের দিন স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানো হয়। গত মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের বেল্টিং বাজারের কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় শ্রেয়সীদেবীকে। রক্ত পরীক্ষায় ‘এনএস ১ পজিটিভ’ রিপোর্ট মেলে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার শিশুমঙ্গল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যু শংসাপত্রে লেখা হয়, ‘হাইপোভলেমিক শক অ্যান্ড মাল্টি অর্গ্যান ফেলইওর ইন এ এনএস ১ রিঅ্যাক্টিভ পেশেন্ট’।

স্বামী অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শ্রেয়সীদেবীর প্লেটলেট ২৩ হাজারে নেমে গিয়েছিল। রক্তচাপও অনেক কমে গিয়েছিল। ছ’ইউনিট প্লেটলেট দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গিতেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।’’ তবে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা মানতে নারাজ পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধান তৃণমূলের অরিন্দম গুঁইনের বক্তব্য, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী উনি ডেঙ্গিতে মারা যাননি।’’ স্থান‌ীয় তৃণমূল কাউন্সিলর প্রবীর পালের বক্তব্য, ‘‘উনি জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছেন, তবে ডেঙ্গি হয়েছিল এমন তথ্য আমাদের হাতে নেই।’’

Advertisement

দুর্গাপুজোর সময় থেকেই বৈদ্যবাটিতে জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ডেঙ্গির খবর মেলে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাগেরবাগানের বাসিন্দা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধ ব্যবস্থায় পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শ্রেয়সীদেবীর মৃত্যুতে সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রিনপার্ক অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা। বৃষ্টিতে এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। তার উপর মশার লার্ভা মারার তেল বা ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো বা এলাকা সাফাইও ঠিকভাবে হয়নি।

পুরপ্রধান অবশ্য বলেন, ‘‘রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে গত এক-দেড় মাস ধরে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ সচেতন না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।’’ অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠাতেই জল দাঁড়ানোর সমস্যা রয়েছে বলে পুরপ্রধান জানান। প্রবীরবাবুর দাবি, ‘‘এলাকা যথেষ্টই সাফসুতরো। নর্দমায় কোথাও জল জমে নেই। ’’

গত বছর বৈদ্যবাটির পাশের শহর শ্রীরামপুরে কয়েক হাজার মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হন। বহু মানুষের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ডেঙ্গিতে অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি মহামারি ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে রাজ্য প্রশাসনের কালঘাম ছুটে যায়। মাস কয়েক আগে তারকেশ্বরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়কে দেখে সেই প্রসঙ্গ তোলেন।

পাশের শহরের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে যথেষ্ট আগেভাগে বৈদ্যবাটি পুর-কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেননি, এমনই অভিযোগ তুলছেন সাধারণ মানুষ। পুরসভা অবশ্য তা মানতে নারাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement