অপচয়: কোথাও কলের মুখই নেই। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
ভূগর্ভস্থ জলস্তরের ক্ষেত্রে আরামবাগ ব্লকের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে সতর্ক করেছে রাজ্য জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতর। তারপরও এই শহরে বাড়ির ট্যাঙ্ক উপচে জল পড়ে যায় নিত্যদিন। গরুর গা ধোয়ানো, চাষে জমিতে সেচ, পুকুর ভরাটের কাজেও ব্যবহার হচ্ছে পানীয় জল। বেশ কিছু কলের মুখ নেই। কোথায় আবার কলের মুখ খোলা থাকলেও সেটা বন্ধ করা
হয় না।
আরামবাগ পুরসভা এলাকায় পানীয় জল এমন অপব্যবহার ও জল সংরক্ষণে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।
মোট ১৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি ওয়ার্ড নিয়ে আরামবাগ পুরসভার মূল শহর। বাকি সব গ্রামকেন্দ্রীক। গ্রামকেন্দ্রীক সব ওয়ার্ডেই কলের জলেই আনাজের খেতে সেচের ব্যবস্থা নজরে এসেছে। খোদ শহরেও বেশ কিছু কলের মুখ বছরের পর বছর ধরে খোলাই পড়ে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরহাটি মোড়, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুর, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পি সি সেন রোড, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড হাসপাতাল চত্বর ইত্যাদি জায়গা ঘুরলেই বেহাল কল চোখ পড়ে।
কিছু জায়গায় অবশ্য কল সারাতে উদ্যোগী হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। যেমন, মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা নিজেরাই প্লাস্টিকের মুখ লাগিয়েছেন। ১০ নম্বর ওয়ার্ড বাদলকোনায় কাঠের গোঁজ ঢুকিয়ে পাইপের মুখ বন্ধ করা হয়েছে। ওই বাদলকোনার অনেক বাসিন্দাই কলের জল দিয়ে নিয়মিত ১২-১৪টা করে গরু-মোষের গা ধোয়ান। বিষয়টা পুরসভার অজানাও নয়। অথচ পুরসভার হিসেবই বলছে, প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ তোলা জলের ৬০ শতাংশর বেশি অপচয় হচ্ছে।
আরামবাগ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছ, সারা দিনে ৫ দফায় মোট সাড়ে ৬ ঘন্টা জল সরবরাহ করা হয়। ১৯টি ওয়ার্ডের ৬৬ হাজার ৭৯ জন বাসিন্দার জন্য প্রতিদিন ৯.৪ মিলিয়ন লিটার জল তোলা হয় পাঁচটি জলাধারে। ২ লক্ষ লিটার থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যন্ত ধারণক্ষমতা ওই জলাধারগুলির। পাম্প হাউস আছে মোট ২৮টি। মাথা পিছু জল দেওয়া হচ্ছে ১৩৬ লিটারের কিছু বেশি। অথচ আরামবাগ পুরসভার মত মফস্বল শহরে মাথা পিছু ৭০ লিটার জলই রীতি বলে পুরসভা জল বিভাগ থেকে বলা হয়েছে। সর্বসাধরেণের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন রাস্তা, পাড়া, শ্মশানঘাট ইত্যাদি মিলিয়ে কলের সংখ্যা ১১৫০টি। জলের পাইপ লাইন ১৫৬ কিলোমিটার। পানীয় জলের টিউবওয়েলের সংখ্যা ৮২৫টি।
হাসপাতাল রোড সংলগ্ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিন্ময় ঘোষের অভিযোগ, “কোন পরিকল্পনা না করেই দিনে ৫ দফা পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করছে পুরসভা। এ দিকে বহু কলের মুখ নেই। সেই জলের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ নিয়ে বহুবার পুরসভাকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
১০ নম্বর ওয়ার্ড বাদলকোনার শ্যামাপদ যশ বলেন, “বাম আমলে জলকর চালু থাকায় জল অপচয় ছিল না বললেই হয়। তৃণমূল পুরবোর্ড জল অপচয় রুখতে যখন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না, তখন ফের জলকর চালু করে মিটারের ব্যবস্থা করুক। তাতে অপচয় অনেকটা কমবে।”
আরামবাগের পুরপ্রধান স্বপন নন্দীর সাফাই, “দফায় দফায় মাইকে প্রচার চলে। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। গরুর গা ধোয়ানো, জমিতে সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে জল অপচয় বন্ধে সচেতনতা আরও জোরদার করা হচ্ছে।” তবে শহরের বাসিন্দারা প্রচারের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। কল ভাঙা নিেয় পুরপ্রধানের বক্তব্য, “অভিযোগ এলেই আমরা সারাচ্ছি। কিন্তু মাতালরা ফের ভেঙে দিচ্ছে।”