ঘরবন্দির ডায়েরি
West Bengal Lockdown

ঘরে বসে শুধু বঞ্চনার কথাই কেবল মনে হচ্ছে

ওঁদের সংসার চলে প্রতিদিনের রোজগারে। এক দিন কাজ না থাকলে রোজগারও থাকে না। লকডাউনের এই দীর্ঘ পর্বে কী করছেন ওই সব মানুষেরা? নিজেদের কথা তাঁরা নিজেরাই লিখছেন আনন্দবাজারে। সরকারি কোন সাহায্যও পাইনি আমরা। অথচ যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গেই থাকি।

Advertisement

বিশ্বনাথ রুইদাস (ঢাক শিল্পী)

গোঘাটের শ্যামবাজার গ্রামের রুইদাস পাড়ার বাসিন্দা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৫
Share:

অবসর: বায়না নেই। তাই ঢাক ঝেড়েমুছে রাখা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

এই পাড়ার ৪২ ঘরের আমরা সব ছেলেরা ঢাক বাজিয়ে দিন গুজরান করি। আর স্ত্রীরা পরিচারিকা বা মাঠের কাজ করেন। এমনিতেই দিন আনা দিন খাওয়া সংসার আমাদের। তার উপর এই পরিস্থিতি আমাদের শেষ করে দিচ্ছে।

Advertisement

আমার ষাট বছর বয়স হল। গোঘাটে অনেক রাজনৈতিক খুনোখুনি মারামারি দেখেছি। এলাকা থমথমে থাকে বটে, কিন্তু এমন অসহায় হয়ে কোনওদিন ঘরে বসে থাকতে হয়নি। ফাল্গুন মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত আমাদের বায়না থাকে গাজন, নানা পুজোতে। প্রত্যেকের ২০-২৫ দিন করে। দিনে রোজগার হয় গড়ে দেড় হাজার টাকা থেকে দু হাজার টাকা করে। সে সব বাতিল হয়েছে। প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার বারোয়ারি পুজো বন্ধ। ভিন জেলার পুজোর বায়নাগুলোও এখন থেকেই হয়। সে সবও বন্ধ। পুজোর ৫ দিনের জন্য রোজগার হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার। অন্য কত রাজ্যে বরাত পাই। এ বার তো মনে হচ্ছে, সে সবও হবে না।

সরকারি কোন সাহায্যও পাইনি আমরা। অথচ যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের সঙ্গেই থাকি। সরকারি সাহায্য মানে লোকপ্রসার প্রকল্পের কথা বলছি। পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসন তো বটেই, সারা জেলাও জানে আমাদের রুইদাস পাড়ার সবাই ঢাকি। বছর চারেক আগে রাজ্যস্তরের ঢাক প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হয়ে পুরস্কারও পাই। অথচ আমাদের কাউকেই ওই প্রকল্পের পরিচয় পত্র দেওয়া হয়নি। এই প্রকল্পে লোকশিল্পীদের ১ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা। ওই ভাতা বাদেও সরকারি বিজ্ঞাপন বা অনুষ্ঠান প্রতি হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। আবার ৬০ বছরের বেশি বয়সের শিল্পীরা ঘরে বসে পাবেন মাসে ১ হাজার টাকা করে পেনশন। এখন ঘরে বসে থেকে, আর আধপেটা খেয়ে খালি এইসব অবহেলার কথাই বেশি মনে হচ্ছে।

Advertisement

রেশন নিয়েও তো ছেলেখেলা হচ্ছে। সরকার মাথাপিছু এক মাসের জন্য ২ কেজি রেশনের চাল ও ৩ কেজি গম দিয়েছে। তা দিয়ে আমাদের মত মানুষের চলে! আমরা স্বামী-স্ত্রী এই বয়সেই দিনে দেড় কেজি চালের খাই। রুটি খাই ৫০০ গ্রাম আটার। জোয়ান ছেলেদের ওই রেশনে কিচ্ছু হবে না। সকলের হাতে থাকা টাকাকড়িও শেষ হতে চলল। একবেলা ভাত আর একবেলা আধপেটা মুড়ি খেয়ে থাকতে হচ্ছে আমাদের।

গ্রামে দু-একজনের দু-পাঁচ কাঠা জমি থাকলেও অধিকাংশের জমি নেই। আমার যেমন এক ছটাকও জমি নেই। সংসারের হাল সামালতে ছেলেদের অষ্টম-নবম শ্রেণির পরেই স্কুল ছাড়িয়ে ঢাক বাজাতে হয়। মেয়েদের কিছুটা পড়িয়ে যেন তেন প্রকারে বিয়ে দিতে হয়। আমাদের জন্য সরকার কিছু একটা ভাবুক।

অনুলিখন: পীযূষ নন্দী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement