West Bengal Lockdown

‘ফেরার তালিকায় নাম, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম’

লকডাউনের পর চোখের সামনে রাতারাতি পুরো পরিস্থিতিটাই বদলে গেল!

Advertisement

শেখ আবুজা (শ্রীরামপুরের মিল্কি-বাদামতলার বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০২:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রায় দেড় মাস ধরে যে কী গেল, কী বলব!

Advertisement

বছর আড়াই আগে দুই বন্ধুর সঙ্গে অজমেরে সোনা-রুপোর কারিগর হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলাম। সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু লকডাউনের পর চোখের সামনে রাতারাতি পুরো পরিস্থিতিটাই বদলে গেল!

আমরা তিন বন্ধু অজমেরে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। নিজেরাই রান্না করে খেতাম। লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। ফলে, উপার্জনও বন্ধ হল। কাজ করলে তবেই টাকা পেতাম। খাব কী, বাড়ি ভাড়া মেটাব কী করে, কিছুই বুঝে পাচ্ছিলাম না। বাড়ি থেকে আমাদের মা-বাবারা বার বার ফিরে আসার জন্য ফোন করতেন। কিন্তু ফেরার পথও তো বন্ধ।

Advertisement

কারখানা-মালিককে সমস্যার কথা বললাম। বরফ কিছুটা গলল। তিনি আমাদের সামান্য ক’টা টাকা দিতেন। তাতে তিন জনের দু’বেলার খাওয়া-দাওয়া কোনও মতে চলছিল। বুঝতে পারছিলাম, বাড়ি না ফিরলেই নয়। কিন্তু উপায় নেই। পুলিশ বের হতে দেয় না। সকালে মাত্র দু’ঘন্টার মধ্যে সব কিছু কিনে ঘরে ঢুকে যেতে হচ্ছিল। অলি-গলিতে পুলিশ। বাইরে থাকব কোন সাহসে!

ফোনেই ওখানকার বন্ধুদের থেকে জানতে পারলাম, সবাই কলকাতায় ফেরার জন্য দরগা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরাও এক সকালে গেলাম ওখানকার দরগা কমিটির লোকজনের কাছে। তাঁদের কথা মতো আধার কার্ডের ফোটোকপি, নাম-ঠিকানা জমা দিলাম। ওঁরা জানালেন, ট্রেনের যাত্রী-তালিকায় নাম উঠলে আমাদের জানিয়ে দেবেন।

শুরু হল দিন গোনা। কবে আসবে সেই ফোন? টাকাও প্রায় শেষ। ভয় লাগছিল। এ মাসের শুরুতেই দরগা কমিটির কাছ থেকে ফোন পেলাম। জানানো হল, ট্রেনের যাত্রী-তালিকায় আমাদের তিন জনেরই নাম উঠেছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু কিছুটা দুশ্চিন্তাও হল। ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে, এতটা পথ, অথচ হাতে টাকা নেই।

শেষে দরগা কমিটির লোকজনেরা সাহস দিলেন, চিন্তা নেই। ট্রেনের টিকিট লাগবে না। যাত্রাপথে খাওয়ানোর দায়িত্ব রেলেরই। ধড়ে প্রাণ পেলাম। কিন্তু মনটা খচখচ করছিলই। এ ভাবে টাকা-পয়সা ছাড়া যাওয়া যায়!

সোমবার ঠিক সময়েই ফেরার ট্রেন ছাড়ল। ট্রেনে ওঠার সময় রেলের তরফে প্রত্যেককে টিকিট দেওয়া হল বিনা পয়সায়। পথে খাবার, জলের বোতলও দিল। অজমের থেকে মঙ্গলবার সকালে ডানকুনি এসে পৌঁছলাম। প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর এখন বাড়িতেই গৃহবন্দি।

আপাতত দুশ্চিন্তামুক্ত। বাবা, মা-ও নিশ্চিন্ত।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement