সচেতন: দূর থেকেই কেনাবেচা। নিমদিঘি বাজারে। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা
ছবিটা কিছুটা বদলাল।
গত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবার দুই জেলার বেশিরভাগ দোকান-বাজারেই ভিড় কমল। বেশির ভাগ বাজারেই নির্দিষ্ট ব্যবধানে ক্রেতাদের দাঁড়ানোর জন্য চক বা চুন দিয়ে গোলাকার গণ্ডি কেটে দেয় পুলিশ প্রশাসন। ফলে, ভিড় লাগামছাড়া হতে পারেনি। বেশ কিছু এলাকায় ঘিঞ্জি জায়গা থেকে বাজার সরিয়ে কাছাকাছি মাঠে বা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, মুদি দোকানগুলি ভিড় এড়াতে ফর্দ নেওয়া শুরু করেছে। ক্রেতারা ফর্দ দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। পরে ফর্দ অনুযায়ী সামগ্রী ব্যাগে ভরে ফোনে ক্রেতাকে ডেকে তা তুলে দিচ্ছেন দোকানি। এই ব্যবস্থাতেও মুদি দোকানের ভিড় উধাও হয়েছে।
লকআউট ঘোষণার পরেই দোকান-বাজারে ভিড় উপচে পড়ছিল। উদ্বেগ বাড়ছিল প্রশাসনের। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তরফে নানা পরিকল্পনা করা হয়। এ দিন উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গিয়েছে, ভিড় কম। গোঘাটের কামারপুকুর ডাকবাংলো এলাকার ঘিঞ্জি আনাজ বাজার স্থানান্তরিত হয়েছে স্থানীয় শ্রীপুর মাঠে। সেখানে বিক্রেতারা যথেষ্ট তফাতে বসতে পারছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই খুশি।
তবে, কামারপুকুর পারলেও ব্যর্থ আরামবাগ। এই শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদরঘাটে পুরাতন সব্জি বাজার বসে। ঘিঞ্জি এই বাজার এ দিন থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বয়েজ স্কুল মাঠে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসনের। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কেউ সেখানে যাননি। তাঁদের বক্তব্য, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে পণ্যের জোগান এবং সরবরাহের স্থায়ী পরিকাঠামো রয়েছে। রাতারাতি সরানো যাবে না। বাজার সরাতে জোর খাটাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে একদফা বচসাও হয় ব্যবসায়ীদের। কয়েকজন কাউন্সিলর ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি সামলান।
ওই ভিড়ে করোনা-সুরক্ষার লেশমাত্র ছিল না। পরে পুলিশ ভিড় হটিয়ে ক্রেতাদের যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার ব্যবস্থা করে। পুরপ্রধান স্বপন নন্দী জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা হবে।
শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, বৈদ্যবাটী, ভদ্রেশ্বর-সহ বিভিন্ন জায়গায় এ দিন মাছের দাম যথারীতি বেশি ছিল। আগের তিন দিনের তুলনায় শুক্রবার উত্তরপাড়া, ভদ্রকালীতে রাস্তাঘাটে ভিড় অনেকটাই কম ছিল। মুদির দোকানে হামলে পড়ে মালপত্র কেনার প্রবণতাও সে ভাবে দেখা যায়নি। তবে বলাগড়ের জিরাটের আনাজ বাজারে ভালই ভিড় জমে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুলিশের সামনে ক্রেতারা নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়াচ্ছিলেন। পুলিশ সরে গেলেই সেই সচেতনতা উধাও হয়ে যাচ্ছিল। শ্রীরামপুরে জিটি রোডের ধারে একের পর এক ওষুধের দোকানে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতার লাইন দেখা গিয়েছে। তবে প্রায় সব জায়গাতেই ক্রেতারা নিজেরাই নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে ওষুধ কিনেছেন। সুরক্ষার জন্য অনেক দোকানি গেট বন্ধ করে বেচাকেনা করেছেন। চুঁচুড়ার বাজারগুলিতেও খদ্দেরের সংখ্যা কম ছিল কম। ফলে, অনেক বিক্রেতার আনাজ এ দিন অবিক্রিত থেকে গিয়েছে।
এ দিন সকাল ১০টার মধ্যে শেওড়াফুলি হাটের আনাজ-বাজার ফাঁকা হয়ে যায়। ট্রেন না চলায় পাইকারি বিক্রেতারা সরাসরি চাষিদের থেকে ছোট গাড়ি করে আনাজ নিয়ে আসছেন। এখানে আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে, উচ্ছে, করলা, বেগুন, টোম্যাটোর জোগান কিছুটা কম। বৈদ্যবাটী, শেওড়াফুলিতে মুদির দোকানেও জোগান কম। এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে চন্দননগর থেকে মুড়ি আসে। এখন অনেক মুড়ি কারখানা বন্ধ। তাই জোগান কম।’’
হাওড়া গ্রামীণ এলাকার দোকান-বাজারেও ভিড় নিয়ন্ত্রণে সাদা রং দিয়ে বৃত্ত কেটে দেওয়া হচ্ছে। বাগনান-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই কাজ বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়। তবে, কিছু দোকান-বাজারে ভিড় দেখা গিয়েছে শুক্রবারও। তবে প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি ছিল বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, লকডাউনের জেরে তেলের মিল বন্ধ থাকায় সর্ষের তেলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।
জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, যে সব গাড়িতে পণ্য আসে, সুযোগ বুঝে তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অনেক গাড়ি রাস্তায় নামতে চাইছে না। এর বাইরে কালোবাজারি বা বেআইনি ভাবে সামগ্রী মজুতের ঘটনা ঘটেনি বললেই চলে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, কালোবাজারির খবর পেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদিও এমন অভিযোগ কম।