প্রতীকী ছবি
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক কিশোরীর রক্ত লাগবে। মোবাইলে খবর পেয়ে লকডাউনের মধ্যেও বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিয়ে এলেন মাহেশের এক যুবতী। শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে রক্তের সঙ্কট। সে কথা শুনেই মাহেশ কলোনির এক যুবক হাসপাতালের গাড়িতে চেপে সেখানে গিয়ে রক্ত দিয়ে এলেন।
এখনও সে ভাবে গরম পড়েনি। তার আগেই হুগলির জেলার বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের আকাল চলছেই। করোনা পরিস্থিতিতে বাতিল হচ্ছে একের পর এক রক্তদান শিবির। ফলে, বিভিন্ন হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। সঙ্কট মেটাতে জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে এ ভাবেই এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তাঁদের রক্তে প্রাণ বাঁচছে রোগীর।
হুগলির চারটি সরকারি হাসপাতাল এবং শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ব্লাডব্যাঙ্ক রয়েছে। প্রতিটি জায়গাতেই এক পরিস্থিতি। কেউ রক্ত নিতে এলে হাসপাতালের তরফে তাঁকে রক্তদাতা জোগাড় করে আনতে বলা হচ্ছে। রক্ত দিলে তবেই মিলছে কাঙ্ক্ষিত রক্ত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবশ্য হাসপাতালগুলি চুপ করে বসে নেই। দিন কয়েক ধরেই শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিচিতদের কাছে এই নিয়ে দরবার করছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বলা হচ্ছে রক্তসঙ্কটের কথা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এসেছে। অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও রক্ত দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে রক্তদাতাকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা এবং পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে এই হাসপাতালের তরফে। হাসপাতালের কর্মীরাও রক্ত দিচ্ছেন।
আরামবাগ হাসপাতালে রক্তের প্রচুর চাহিদা থাকে। ওই মহকুমার পাশাপাশি লাগোয়া একাধিক জেলার মানুষ এখান থেকে রক্ত নিয়ে যান। স্বভাবতই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা ব্লাডব্যাঙ্কের। সমস্যা সমাধানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তাতে সাড়াও মিলছে। চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মী ছাড়াও রোগীর আত্মীয়েরাও রক্ত দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার আরামবাগের কাঁটাবনির একটি সংস্থা রক্তদান শিবির করে। আরামবাগ হাসপাতালের তরফে সেখান থেকে ২৫ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্তদের জন্য রক্তের জোগান স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছে ওই রোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে কাজ করা শ্রীরামপুরের একটি সংগঠন। তারা রক্তদাতা জোগাড়ের চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার তাদের উদ্যোগে মোট ১০ জন ওয়ালশ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত দেন। ওই হাসপাতালে রক্ত সঙ্কট মোকাবিলায় শুক্রবার সেখানে গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছেন একটি রাজনৈতিক সংগঠনের চার কর্মীও। রক্তদাতা জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর এবং চন্দননগর হাসপাতালও। আপাতত এ ভাবেই রক্তদাতা জোগাড় করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।
হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রক্তদান শিবির আয়োজনে কোনও বাধা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মানতে হবে। এক সঙ্গে বেশি জন শিবিরে থাকা যাবে না।’’
গ্রামীণ হাওড়ায় সঙ্কট এখনও ততটা হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, উলুবেড়িয়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এবং হাওড়া জেলা হাসপাতালে এখনও যে রক্ত মজুত আছে, তাতে বড় কোনও বিপর্যয় না হলে আগামী মে মাস পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু তার পরে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ, এখন রক্তদান শিবির বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে স্বাস্থ্যভবনে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে লকডাউনের বিধি না ভেঙে ছোট ছোট গোষ্ঠী করে রক্তদান শিবিরের অনুমোদন দেওয়া। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, এই প্রস্তাবে যদি স্বাস্থ্যভবন সায় দিলে সেইমতো শিবিরের আয়োজন করতে বলা হবে উদ্যোক্তাদের।