শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরে রেশন দোকানে বিক্ষোভ।
আবেদন করেও মেলেনি রেশন কার্ড। ফলে, গণবন্টনের সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না দুই জেলার বহু গরিব মানুষ। তার জেরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ যে ভাবে বাড়ছে, তাতে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দূরত্ব-বিধি মানাও শিকেয় উঠছে।
রেশন কার্ড না থাকায় সরকারি খাদ্যসামগ্রী না মেলায় সোমবার গোঘাট-২ ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। অনেকে বিডিও-র ঘরেও ঢুকে যান। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, পেটের টানেই তাঁরা এই ভাবে জড়ো হতে বাধ্য হয়েছেন। বিডিও-র আশ্বাসে বিক্ষোভ থামে।
হাজিপুর পঞ্চায়েতের পাবা গ্রামের অরুণ দাস, বদনগঞ্জ পঞ্চায়েতের কোকন্দের অণিমা মালিক, পশ্চিমপাড়া পঞ্চায়েতের বাবুরামপুরের সওকৎ মোল্লা বা বেঙ্গাই পঞ্চায়েতের আগাই গ্রামের ঈশিতা পালেরা সকাল ৯টা বাজতে না বাজতেই ব্লক অফিসের সামনে চলে আসেন। দেখতে দেখতে কয়েকশো লোক জড়ো হয়ে যান। অবিলম্বে রেশন কার্ড অথবা খাদ্যসামগ্রীর দাবিতে সরব হন তাঁরা।
কোকন্দ গ্রামের অণিমা পরিচারিকার কাজ করেন। স্বামী দিনমজুর। ছেলেমেয়ে নিয়ে ৬ জনের সংসার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পাঁচ বছর আগে শুধু ছেলের রেশন কার্ড হয়েছে। বাকিদের হয়নি। গত চার বছরে চার বার আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। ফলে, আমরা চাল-গম পাচ্ছি না। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের মতো গরিব মানুষ সরকারি সুবিধাটুকু পাবে না, প্রশাসনের এ কেমন বিচার!’’
লকডাউনে হাজিপুরের ভুটভুটি-চালক অরুণ দাসেরও রোজগার নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তিন জনের সংসার। চার বছর ধরে আবেদন করেও রেশন কার্ড পাইনি। না পাচ্ছি রেশনের চাল, না মিলছে রান্নার গ্যাস।’’ রেশন কার্ড না হওয়ায় সমস্যায় পড়ে বিক্ষোভে শামিল হন পশ্চিমপাড়া পঞ্চায়েতের শ্যামপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী মহিলা নুটু ভাণ্ডারীও।
বিডিও (গোঘাট-২) অভিজিৎ হালদার বলেন, ‘‘নতুন রেশন কার্ড না পাওয়া নিয়ে যাঁদের অভিযোগ আছে, তাঁদের সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে নাম নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে। পঞ্চায়েত বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। তারপরে তাঁদের আবেদনপত্র জমা নিয়ে খাদ্য দফতরে পাঠানো হবে।’’ বিডিও আরও জানান, রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করার প্রমাণ দেখালে ব্লক প্রশাসনের তরফে কুপন দেওয়া হবে। সেই কুপন দেখিয়ে রেশন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যাবে। যাঁদের কাছে সেই প্রমাণ নেই বা আবেদন করেননি, তাঁদের ত্রাণ হিসাবে চাল দেওয়া হবে।
হুগলি জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, ‘‘কেউ কার্ড না পেয়ে থাকলে তাঁদের আবেদনপত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
রেশন কার্ড না-পেয়ে এ দিন শ’দুয়েক মানুষ বিক্ষোভ দেখান উলুবেড়িয়ার বাণীতলায় মহকুমা খাদ্য দফতরেও। জমায়েতের ফলে এখানেও দূরত্ব-বিধি লঙ্ঘিত হয়। বিক্ষোভের জেরে ওই দফতরের মূল গেট খোলা হয়নি। গেট খোলার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা সরব হন। দফতরের ভিতরে দু’জন কর্মী ছিলেন। রেশন কার্ডের ব্যাপারে বিক্ষোভকারীদের কোনও প্রশ্নের উত্তর তাঁরা দেননি বলে অভিযোগ। উলুবেড়িয়া পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ আজিজুলের ক্ষোভ, ‘‘আট বছর ধরে রেশন কার্ডের জন্য ঘুরছি। আট জনের সংসারে রোজগার নেই। অথচ, সরকারি সুবিধাটুকু পাচ্ছি না।’’
মহকুমা খাদ্য দফতরের আধিকারিক সুজিতকুমার মান্ডি জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা আবেদন করে থাকলে অবশ্যই কার্ড পাবেন। ওঁদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হবে। লকডাউনের ফলে, অনেক কর্মী আসতে পারছেন না। অফিসের মূল দরজা খুলে দিলে এক সঙ্গে অনেকে ঢুকে পড়তেন। তাতে, দূরত্ব-বিধি বজায় থাকত না।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)