প্রতীকী ছবি।
অনেক দিন পরে আখতার হোসেনের মনে খুশির জোয়ার। শনিবার থেকে বন্ধ মিল খুলবে। আবার গায়ে-গতরে খেটে বৌ-ছেলেমেয়ের মুখে দু’টো ভালমন্দ খাবার তুলে দিতে পারবেন।
আখতার রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিলের ব্যাচিং বিভাগের অস্থায়ী শ্রমিক। তাঁর মতোই ওই মিলের স্থায়ী-অস্থায়ী হাজার তিনেক শ্রমিকের দুশ্চিন্তা দূর হল। শ্রমিক এবং মালিকপক্ষ একমত হওয়ায় বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজ্যের সহকারী শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্তের ঘরে বৈঠকে মিল খোলার ব্যাপারে সিলমোহর পড়েছে।
লকডাউনের শুরুতেই ওয়েলিংটন বন্ধ হয়। কিছু দিন আগে সরকারের অনুমতি মিললেও অবশ্য মিল খোলেনি। এই নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। শ্রম দফতরে একাধিক বৈঠকেও রফাসূত্র মেলেনি। শেষে, মঙ্গলবার, রথযাত্রার দিন রিষড়ার পুর-প্রশাসক বিজয় মিশ্রের মধ্যস্থতায় মিল কর্তৃপক্ষ এবং এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি এবং সিটু-র প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। সেখানেই জট কাটে।
বৃহস্পতিবার শ্রম দফতরে বৈঠকে বিজয়বাবু, মিলের আধিকারিক, শ্রমিক-নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শ্রীরামপুরের ডেপুটি শ্রম-কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীও ছিলেন। মঙ্গলবারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরেই ঠিক হয়, কাল, শনিবার থেকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত শেড মেরামতের কাজ শুরু হবে। ওই কাজ শেষ হলেই চালু হবে উৎপাদন। প্রশাসন সূত্রের খবর, মিলের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা কমিটি বিবেচনা করবে।
বিজয়বাবু বলেন, ‘‘শ্রমিকদের পাশাপাশি মিল বন্ধের প্রভাব স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের উপরেও পড়ছিল। মিল খুললে সকলেই উপকৃত হবেন। এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’ এআইটিইউসি-র হুগলি জেলা সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি যাতে রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের কাজ ৭-১০ দিনের মধ্যে শেষ করা যায়। শ্রমিকদের অবস্থা খুব খারাপ। ওঁদের কিছু অগ্রিম দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে।’’
আখতারের পরিবারের সদস্য ৮ জন। তিনি একাই রোজগেরে। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি কী, বলে বোঝাতে পারব না। কোনও রকমে দিন কাটছে। মিল খুলবে শুনে খুব আনন্দ হচ্ছে। কিছু অগ্রিম পেলে সুবিধা হয়।’’
বহু শ্রমিকেরই একই বক্তব্য।