দাওয়াই: আগে এ ভাবেই চলত বিদ্যুৎ চুরি। ছবি: সুব্রত জানা
ছবিটা বদলে গিয়েছে এক বছরেই!
আগে বাগনানের কাছারিপাড়া গ্রামে গেলেই দেখা যেত, যেখানে-সেখানে ‘হুকিং’। অবৈধ ভাবে নেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগে চলছে টিভি, ফ্রিজ, চায়ের দোকান। আর এখন গ্রামবাসীরা দৌড়চ্ছেন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে!
ম্যাজিকের নাম— ‘ইনস্যুলেটেড কেবল’। ওই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে কেবলে ঢাকা তার ব্যবহার শুরু করেছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য। কারণ, ওই তার থেকে ‘হুকিং’ সম্ভব নয়।
২০১১ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে হুকিংয়ের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ দফতর অভিযান চালানোর সময়ে গোলমালে পুলিশের গুলিতে এক মহিলা ও এক বালিকার মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। তার পর থেকেই হুকিংয়ের বিরুদ্ধে গোটা রাজ্যেই অভিযান কমে যায়। ফলে, অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারেও লাগাম পরানো যায়নি। হাওড়ারই বাগনানের মুর্গাবেড়িয়া, নওপাড়া, হাটুরিয়া, উলুবেড়িয়ার ধুলাসিমলা, হিরাপুর, শাখাভাঙা, আমতার চন্দ্রপুর-সহ কিছু গ্রামে হুকিং করে বিদ্যুৎ নেওয়া হয় বলে বণ্টন সংস্থারই অভিযোগ। ওই সংস্থার কর্তাদের একাংশ মানছেন, বিক্ষোভের ভয়ে তাঁরা অনেক সময়েই অভিযান চালাতে পারেন না। ফলে, রাজস্বের ক্ষতি হয়।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকার আমতা, পাঁচলা, সাঁকরাইলের একাংশ, বাগনান, উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর প্রভৃতি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বণ্টন সংস্থার উলুবেড়িয়া ডিভিশন। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, উলুবেড়িয়া ডিভিশনের অধীনে শুধু সাধারণ গ্রাহকের সংখ্যা ৪ লক্ষ ২২ হাজার। এর উপরে রয়েছে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ। বণ্টন সংস্থার কর্তারা জানান, তাঁদের শিল্প এবং বাণিজ্যিক সংযোগ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সর্বনাশ ঘটছে সাধারণ গ্রাহকদের একটা বড় অংশের জন্য। এর ফলে, একদিকে যেমন রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই বিভিন্ন জায়গায় থাকছে লো-ভোল্টেজের সমস্যা। ওই কর্তাদের হিসেব বলছে, বর্তমানে উলুবেড়িয়া ডিভিশনের সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে আয় হয় মাসে গড়ে ১৮ কোটি টাকা। হুকিং না-হলে এই আয় আরও অন্তত ৩০ শতাংশ বাড়ত বলে তাঁদের ধারণা।
সমস্যা মেটানোর উপায় খুঁজতে বসেই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাতে এসেছে ‘ইনস্যুলেটেড কেবল’। কাছারিপাড়া গ্রামে নিজেদের তহবিলের টাকায় পরীক্ষামূলক উদ্যোগে সাড়া মেলায় এ বার গ্রামীণ বিদ্যুদয়নে দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ বিদ্যুৎজ্যোতি যোজনা প্রকল্পেও ওই কাজ করতে চাইছে তারা। ওই প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে বিদ্যুৎভবনে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। হুকিং বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন গ্রাম থেকে যাঁরা বৈধ সংযোগের জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের সংযোগ দিয়ে দেওয়া হবে। ফলে, লোকসান অনেকটাই কমে যাবে।’’
অপেক্ষা শুধু বিদ্যুৎ ভবনের সবুজ সঙ্কেতের।