থইথই: জলমগ্ন খানাকুল-২ ব্লকের গড়েরঘাট। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
কানায় কানায় ভরে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর এবং রূপনারায়ণ। বৃষ্টির জমা জল নামবে কোথায়?
কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই আরামবাগ মহকুমার ছ’টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকার মাঠঘাট ডুবে গিয়েছে। যেন বন্যার ছবি! অধিকাংশ চাষজমিতে প্রায় তিন ফুট জল জমেছে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষিজীবীরা। আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। এরপরে গ্রামে জল ঢোকার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
তবে, পরিস্থিতি এখনও জটিল হয়নি বলে মহকুমা কৃষি দফতরের দাবি। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় আমন চাষ হয় প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে। বর্ষাকালীন আনাজ চাষের এলাকা ১৫০০ হেক্টরের কিছু বেশি। কত চাষজমি ডুবে রয়েছে, তার হিসেব চলছে জানিয়ে মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ বলেন, “স্থির জলে আমন ধান ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। জমি দিয়ে জল বয়ে গেলে সেই ধান ৫-৭ দিন পর্যন্ত নষ্ট না-হওয়ার নজির আছে। এখানে ধীর গতিতে হলেও জল বইছে। চাষিদের কারিগরি পরামর্শ দিতে দফতরের কর্মীরা মাঠে ঘুরছেন।’’
মহকুমার সব নদনদী, খাল-বিল এবং বৃষ্টির জমা জল নেমে দক্ষিণ প্রান্তে রূপনারায়ণ নদে পড়ে। রূপনারায়ণ ভর্তি থাকায় সেই জল নামছে না। উল্টে নদীর জল বিভিন্ন খালের সংযোগ-মুখ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে মাঠে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি খানাকুল-২ ব্লকের। এই এলাকাই মহকুমার সবচেয়ে নীচু। এখানকার ১১টি পঞ্চায়েতের ৫৩টি মৌজার কোথাও জমি জেগে নেই। রাস্তাতেও জল জমে যাওয়ায় সোমবার দুপুরের পর থেকে জগদীশতলা এবং গড়েরঘাটের মধ্যে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আরামবাগের তিরোল, বাতানল, গৌরহাটি এবং সালেপুরের মাঠে স্রোত বইছে। বাঁকুড়ার জমা জল আমোদর ও তারাজুলি খাল দিয়ে বয়ে এসে নকুন্ডা, শ্যাওড়া, বালি এবং গোঘাট পঞ্চায়েত এলাকার মাঠ ভাসাচ্ছে। নকুন্ডা পঞ্চায়েত এলাকার কুলিয়া, দেওয়ানচক এবং কোটা গ্রামে মানুষের উঠোনেও জল ছোঁয়ার উপক্রম হয়েছে। একই ভাবে অমরপুর, পশ্চিমপাড়া, বদনগঞ্জ ইত্যাদি এলাকার মাঠঘাটে জল থইথই করছে। আমন ধান নিরানি বন্ধ রাখতে হয়েছে চাষিদের। বৃষ্টির জেরে আরামবাগের বাতানল এবং খানাকুল-২ ব্লকের রাজহাটিতে দু’টি মাটির বাড়ি ভেঙেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ ছাড়া দ্বারকেশ্বর নদের জল আরও বাড়তে পারে জানিয়ে সেচ দফতর সতর্ক করায় আরামবাগ ব্লকের সালেপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকায় নদীবাঁধের ভিতরে বসবাস করা বেড়াবেড়ে এবং ডহরকুণ্ডু গ্রামের মোট ৮৯টি পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত। এ দিন দ্বারকেশ্বরের জলের উচ্চতা ১২.৩৭ মিটার হয়েছে বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। তুলনায় জল কম রয়েছে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীতে।