Crime

দুই মদের আসরে দুই যুবক খুন

ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের পড়শি সুনীল দাস নামে এক যুবককে মারধর করেন এলাকার লোকজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০২:৪৩
Share:

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুমিত (ইনসেটে, বাঁ দিকে) ও শুভঙ্করের (ইনসেটে, ডান দিকে) পরিজনরা। ছবি: তাপস ঘোষ ও সুশান্ত সরকার

মদের আসরে ঝামেলার জেরে হুগলির দুই এলাকায় খুন হয়ে গেলেন দুই যুবক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চুঁচুড়ার সমবায়নগর এলাকার একটি পুকুর থেকে সুমিত সরকার (২৪) নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। সুমিতের বাড়ি কাছেই ৩ নম্বর গেট এলাকার আয়মা কলোনিতে। তাঁর পরিবারের লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই একই এলাকার বাসিন্দা, নিহতের বন্ধু বুটন সিংহ এবং অভিজিৎ দাস নামে দুই যুবককে পুলিশ ধরে। খুনের প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে স্থানীয় লোকজন বুটন, অভিজিৎ-সহ তিন অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়।

ওই দিন বিকেলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি বলাগড়ের কুন্তীঘাট এলাকার শুভঙ্কর দাস (২০)। শুক্রবার সকালে গ্রামবাসীরা কুন্তী নদীর পাড়ে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের পড়শি সুনীল দাস নামে এক যুবককে মারধর করেন এলাকার লোকজন। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুভঙ্কর এবং সুনীল বৃহস্পতিবার রাতে একই জায়গায় মদ খায় বলে তদন্তে

Advertisement

পুলিশ জেনেছে।

চুঁচুড়ার খুনটির ক্ষেত্রে উইকেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধের কথা কবুল করেছে। সমবায়নগরের পুকুর সংলগ্ন রাস্তা থেকে হামলাকারীদের ফেলে যাওয়া একটি উইকেটের ভাঙা টুকরো, রক্তমাখা চটি এবং একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। চটি এবং মোবাইলটি কার তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। ধৃতদের শুক্রবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক দু’জনকেই আট দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘মদের আসরে বন্ধুদের মধ্যে বচসা থেকে মারপিটের জেরে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কার্তিক দাস (বান্টি) নামে এক অভিযুক্ত পলাতক। তার খোঁজ চলছে। ধৃতদের জেরা করে ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা তা-ও দেখা হচ্ছে।’’ নিহতের স্ত্রী পিয়াসা সরকার বলেন, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে ও বেরিয়েছিল। কী কারণে বন্ধুরা খুন করল বুঝতে পারছি না। ওকে মদ খাইয়ে বেঁহুশ করেই হামলা

চালানো হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিত পেশায় রং মিস্ত্রি ছিলেন। কয়েকদিন আগে আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে সপরিবারে তিনি নৈহাটিতে যান। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ফেরেন। বেশ কিছুদিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না-হওয়ায় রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন। রাত ১২টাতেও তিনি না-ফেরায় পরিবারের লোকেরা চিন্তায় পড়েন। এর ঘণ্টাখানেক পরে তাঁরা খবর পান, সুমিতের দেহ পড়ে রয়েছে সমবায়নগরের পুকুরে।

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কারবালা অঞ্চলের এক জায়গায় তারা সকলে মিলে মদ খায়। সেখানেই নেশার ঘোরে কোনও কিছু নিয়ে তাদের বচসা থেকে হাতাহাতি হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে মিটেও যায়। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময়ে ফের দু’পক্ষের গোলমাল হয় রাস্তাতেই।

সমবায়নগরের কিছু বাসিন্দা জানান, গভীর রাতে তাঁরা গোলমাল, চেঁচামেচি শুনেছেন। উইকেট নিয়ে দু’পক্ষের মারামারি দেখে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভয়ে প্রথমে কেউ বেরোতে চাননি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, রাস্তায় চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। পুকুরে তাঁরা সুমিতের দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।

বলাগড়ের খুনটি নিয়ে জেলা ( গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন,‘‘প্রহৃত হাসপাতালে ভর্তি। তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে। আপাতত একজনকেই পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল এবং ঘটনায় কারা জড়িত, সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতি বছর দোলের আগে শিবপুজো উপলক্ষে কুন্তীঘাটে মেলা বসে স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে সেই মেলায় যান শুভঙ্কর। পরে মেলা প্রাঙ্গণের কাছেই শুভঙ্কর বন্ধুদের সঙ্গে মদের আসরে বসেন। সেখানে সুনীলও ছিল বলে তদন্তে পুলিশ জেনেছে। ওই আসরেই শুভঙ্কর বন্ধুদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপানো হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় নদীর পাড়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। এর আগেও মধ্য চল্লিশের সুনীলের বিরুদ্ধে কোপানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় তার হাজতবাস হয় বলেও স্থানীয়দের দাবি।

সুনীলের বিরুদ্ধেই থানায় ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের বাবা সুশীল দাস। নিহতের কাকা গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘ভাইপো ভাল ছেলে। রাজমিস্ত্রির কাজ করে খেটে খেত। বন্ধুদের সঙ্গে কোনও ঝামেলা হতেই পারে। সব অল্পবয়স্ক ছেলে। তা বলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নদীর পাড়ে ফেলে দেব? আমরা পুলিশের কাছে এর বিচার চাই। দোষীরা শাস্তি পাক।’’ একই দাবি এলাকাবাসীরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement