১০০ দিনের কাজে রাস্তা তৈরিতে দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় দলেরই অঞ্চল যুব সভাপতিকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতি তথা ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে। পুরশুড়ার ভাঙামোড়া পঞ্চায়েতের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে সোমবার ওই ঘটনায় প্রহৃত যুব অঞ্চল সভাপতি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য উপপ্রধান তপন সামুই ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উপপ্রধান তপন সামুই অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘বিধায়কের নাম করে অনিন্দ্য ও তার লোকজন রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদার সংস্থার কাছে তোলা চাইছিল। তা না পাওয়ায় রাস্তার গুণগত মান খারাপ দাবি করে কাজ বন্ধ করতে চাইছিল এদিন। স্থানীয় মানুষই তার প্রতিবাদ করেছেন।’’ প্রসঙ্গত, বৈকুণ্ঠপুর গ্রামেই দলের দুই বিরুদ্ধ গোষ্ঠী পুড়শুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমান এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি মেহবুব রহমানের ভাইরা থাকেন। অনিন্দ্যবাবু জানান, তিনি বিষয়টি বিধায়ককে জানিয়েছেন।
বিধায়ক বলেন, ‘‘ঘটনার দলীয়ভাবে তদন্ত হবে। রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি হলে যেমন দলের ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রেহাই পাবেন না, তেমনই বিধায়কের নাম করে দলের অঞ্চল সভাপতি তোলাবাজি করলে তিনিও রেহাই পাবেন না। রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি হচ্ছে কি না ব্লক প্রশাসনের কাছেও তার তদন্ত চাওয়া হবে।’’
পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৈকুন্ঠপুর গ্রাম সংলগ্ন দামোদর নদীর বাঁধ সংলগ্ন বরুণ হাজরার বাড়ির ঢাল থেকে বাগ পাড়ার কাশীনাথ বাগের বাড়ি পর্যন্ত ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ১২৭০ ফুট দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে। ৬ ফুট চওড়া রাস্তাটিতে ৬ ইঞ্চি পুরু ঢালাই হওয়ার কথা। এলাকার মানুষের অভিযোগ ছিল, উপপ্রধান এবং ঠিকাদারের যোগসাজশে রাস্তাটি মাত্র ৪ ফুট পুরু করে ঢালাই হচ্ছে। অনিন্দ্যবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত এলাকার উপভোক্তা হিসাবেই রাস্তাটা মাপজোক করে দেখা যায় ৬ ইঞ্চি পুরু ঢালাই করা হয়নি। এ জন্য এ দিন ঠিকাদার সংস্থার কাছে সরকারি টাকা কেন এ ভাবে নয়ছয় করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রতিবাদ জানাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপপ্রধান দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে জানতে চায় আমি এ সব কৈফিয়ত নেওয়ার কে? এরপরেই মারধর করে আমাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।’’
অন্য দিকে, তপনবাবুর দাবি, ‘‘ওই রাস্তার দাবি প্রায় ২৫ বছরের। সেই রাস্তা যখন তৈরি হচ্ছে তখন অঞ্চল সভাপতি সেখানে এসে রাস্তার ত্রুটি খুঁজে বিধায়কের নাম করে তোলা চাইছিলেন। স্থানীয় মানুষই তার প্রতিবাদ করে।’’
পঞ্চায়েতের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে ভাঙ্গামোড়া বুথের একটি ১৩০০ মিটার কাজের অর্ডার হলেও ৯০০ মিটার কাজ করে টাকা দাবি করেন এক ঠিকাদার। সেই দুর্নীতিও অঞ্চল সভাপতি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য ধরেন এবং ঠিকাদারকে ৯০০ মিটারের টাকা নিতেই বাধ্য করান। ফের রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ঘটনাস্থলে যান পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পার্থসারথি দাঁ। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। এখনই দুর্নীতি হচ্ছে কি না বলা যাবে না। কাজ শেষ হলে তা বরাত অনুযায়ী হয়েছে কি না খতিয়ে দেখে ঠিকাদারকে টাকা দেওয়া হবে।’’ যে রাস্তা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তার ঠিকাদার সুজন দে বলেন, ‘‘কিছুটা জায়গায় ৬ ইঞ্চি পুরু ঢালাইয়ের বদলে ৫ ইঞ্চি ঢালাই হয়েছে। কারণ ওই জায়গায় রাস্তা ৬ ফুট চওড়ার বদলে সাড়ে ৭ ফুট চওড়া করতে হয়েছে স্থানীয় মানুষের চাপে। পঞ্চায়েতকে তা জানানোও হয়েছে।’’ তাঁর আভিযোগ, কাজ শুরুর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার নাম করে নান জন টাকা চাইছেন। ফলে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।