মর্মান্তিক: করোনা-আতঙ্কে সম্প্রতি বালিতে এ ভাবেই দীর্ঘক্ষণ পড়েছিল এক বৃদ্ধার দেহ। ফাইল চিত্র
কয়েক দিন আগে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছিল হাওড়ার বারুইপাড়ার বাসিন্দা ৫২ বছরের অজয় সোমের। অভিযোগ, অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়া সত্ত্বেও করোনা রোগী সন্দেহে তাঁকে ভর্তি নেয়নি কোনও হাসপাতাল।
এমনকি একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই প্রৌঢ়ের অক্সিজ়েন পর্যন্ত জোটেনি। একই ভাবে করোনায় মৃত্যু হওয়ার পরে ডোম না-আসায় বালি বা বেলুড়ে পথেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মৃতদেহ ফেলে রাখার ঘটনা ঘটেছে।
করোনার আবহে একের পর এক এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ‘নৈশ সাহারা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করছে হাওড়া পুরসভা। যার উদ্দেশ্য, রাতে বিপদে পড়া মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া এবং অ্যাম্বুল্যান্স, অক্সিজ়েন, চিকিৎসক এমনকি কেউ করোনায় মারা গেলে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য ডোম ও শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করা। এই পরিষেবার জন্য থাকছে পৃথক কয়েকটি টোল-ফ্রি নম্বর। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই নম্বরে ফোন করলে দ্রুত সাহায্য পৌঁছে যাবে।
পুর প্রশাসনের বক্তব্য, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে রাতে। বিশেষত, গভীর রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। অত রাতে রোগীকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, কোথা থেকে চিকিৎসককে ডাকবেন, অ্যাম্বুল্যান্স বা অক্সিজ়েন মিলবে কোথা থেকে— সব দিক সামলাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে তাঁদের। দুর্ভোগ বাড়ছে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই কেউ মারা গেলে। তখন গোটা প্রক্রিয়াটা বিলম্বিত হচ্ছে।
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রাতে বিপদে পড়া মানুষের সাহায্যের জন্য এই প্রকল্প চলতি সপ্তাহেই চালু হচ্ছে। পরিষেবা পেতে থাকছে কয়েকটি টোল-ফ্রি নম্বর। সেগুলি সারা রাত চালু থাকবে। কোথা থেকে কী মিলবে, ওই নম্বরে ফোন করে লোকজন জানতে পারবেন।’’
ওই পুরকর্তা আরও জানান, জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে কোভিড-রোগীরা হোম আইসোলেশনে আছেন, তাঁদের রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সব সময়ে হাতের কাছে অ্যাম্বুল্যান্স, অক্সিজ়েন বা চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের সাহায্য করতে হাওড়া সিটি পুলিশের থেকে একটি ‘কিরণ’ অ্যাম্বুল্যান্স নিয়েছে পুরসভা। তাতে থাকছে অক্সিমিটার-সহ অক্সিজ়েন সিলিন্ডার। এ ছাড়াও কোনও রোগীর পরিবার ফোন করলে চিকিৎসকের সাহায্য-সহ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। রাতে বাড়িতে কারও মৃত্যু হলে ডোম ও শববাহী গাড়িও পাঠাবে পুরসভা।
পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘সমস্ত ব্যবস্থাই হয়ে গিয়েছে। এর পাশাপাশি আমরা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনে টেলি-মেডিসিন দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছি। উপসর্গহীন এবং উপসর্গ থাকা— দু’ধরনের কোভিড-রোগীরা কী কী ওষুধ খাবেন তার সুস্পষ্ট তালিকা ওই নির্দেশিকায় আছে। তা মেনে আমরা তাঁদের ওই সব ওষুধ খেতে পরামর্শ দেব।’’