বাঁধ বাঁচাতে বসানো হয়েছে ভেটিভার। আরামবাগে। —ফাইল চিত্র
বন্যাপ্রবণ আরামবাগে নদীবাঁধের ভাঙন রুখতে পরীক্ষামূলক ভাবে ভেটিভার ঘাসের চাষ করে সাফল্য এসেছে। এ বার তাই হুগলি জেলার সব নদীবাঁধেই এই বিশেষ প্রজাতির ঘাস চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। চলতি মাসেই ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে এই ঘাস রোপণ শুরু হবে।
আগামী ১৬ থেকে ৩০ মার্চ জেলা জুড়ে ‘ভেটিভার চাষ পক্ষ’ পালন করা হবে বলে বৃহস্পতিবার জেলাশাসকের তরফে সব ব্লক আধিকারিককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ১১ মার্চ বিডিও এবং ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আধিকারিকদের নিয়ে চুঁচুড়ায় একটি কর্মশালারও আয়োজন হয়েছে। ভেটিভার ঘাসের কার্যকর প্রয়োগ নিয়ে কর্মশালায় আলোচনা হবে। জেলার সব পঞ্চায়েতকে নদীবাঁধ, খাল-বিল, পুকুর পাড় মিলিয়ে অন্তত ২ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই ঘাস রোপণ করতে হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “নদীবাঁধ রক্ষায় ভেটিভার খুবই কার্যকরী। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা রয়েছে। একটি ভেটিভার ঘাস সারা বছরে আড়াই কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে। বাঁধে তো বটেই, খাল-বিল, পুকুর পাড়ের ফাঁকা জায়গাতেও ভেটিভার রোপণ করা হবে। ফলে, একদিকে যেমন বাঁধ ও পরিবেশ রক্ষা হবে, তেমনই অনেক শ্রমিক কাজ পাবেন।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১১ সালে আরামবাগ মহকুমার খানাকুল-১ ব্লকের বালিপুর পঞ্চায়েতের উদনায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর বাঁধে প্রায় ৬০০ মিটার এলাকায় ভেটিভার ঘাস লাগানো হয়েছিল। সেই কর্মসূচির শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। ওই এলাকা ভাঙনপ্রবণ বলেই জানান স্থানীয়েরা। ৮০ থেকে ৯০ হাজার কিউসেক জলের চাপেই বাঁধ ভেঙে যায়। কিন্তু ভেটিভার লাগানোর পর ২০১৩ সালে ডিভিসি-র ছাড়া ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কিউসেক জলের চাপেও বাঁধের কোনও ক্ষতি হয়নি। এরপরে ২০১২ সালে আরামবাগ ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে মলয়পুর-১ পঞ্চায়েতের বালিয়া গ্রাম সংলগ্ন মুণ্ডেশ্বরী নদীবাঁধের ৪০০ মিটার এলাকাতেও ভেটিভার ঘাস লাগানো হয়। সেটিও ২০১৩ সালে অক্ষত ছিল। এর পর ২০১৬ পর্যন্ত দফায় দফায় খানাকুলের মাড়োখানা পঞ্চায়েত এলাকার কামদেবচক এবং শশাপোতা সংলগ্ন মুণ্ডেশ্বরী নদীবাঁধে এবং ঢলডাঙায় রূপনারায়ণের নদীবাঁধে ভেটিভার চাষ হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভাল ফল মিলেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন থেকে জানান হয়।
কী ভাবে বাঁধ রক্ষা করছে এই ভেটিভার? জেলা প্রশাসন এবং উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটির উপরে ঘাসের উচ্চতা দুই থেকে আড়াই ফুট হলেও এর শিকড় প্রায় ১৪ ফুট গভীরে প্রবেশ করে মাটি আঁকড়ে থাকে। ফলে, বাঁধ সহজে ভাঙে না। তা ছাড়া, এই ঘাস সহজে নষ্ট হয় না। গরু-ছাগলে মুড়িয়ে খেয়ে নিলেও ফের তা গজিয়ে উঠে। রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজন হয় না। বাঁধ মেরামতির জন্য অনেক ক্ষেত্রে ইউক্যালিপটাসের গুঁড়ি ও বোল্ডার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সময় ও খরচ সাপেক্ষ। সেই জায়গায় ভেটিভার চাষে সময় এবং খরচ দু’টোই কম।
বাংলায় অনেক জায়গায় ভেটিভার ‘খসখস’ নামে পরিচিত। এর আরও উপযোগিতা রয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গবাদি পশুর সুষম খাদ্য হিসেবে এই ঘাস ব্যবহার হতে পারে। বাঁধ রক্ষার পাশাপাশি এই ঘাস বৃষ্টির জলের অপচয় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। ফলে, মাটির নীচে জলস্তর বৃদ্ধি পায়। ভেটিভার থেকে ঝুড়ি, খেলনা-সহ হস্তশিল্পের নানা উপাদানও তৈরি হয়।