মনগড়া: নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে এই ভুয়ো ক্লাবের নামে অনুদানের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিজস্ব চিত্র
ক্লাবের অস্তিত্ব নেই। অথচ, সরকারি অনুদান এসেছে। আর সেই চেক তুলে নিয়ে গিয়েছেন এক তৃণমূল নেতা!
আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লি এলাকায় ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে ওই ভুয়ো ক্লাবের হয়ে গত বছর ২ লক্ষ টাকার এবং এ বছর এক লক্ষ টাকার অনুদানের চেক তুলে নিয়ে যাওয়ায় অভিযোগ উঠল নীতিশ ভট্টাচার্য নামে নবপল্লির এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। দু’বারই আরামবাগ থানার নির্দিষ্ট কাগজে নীতিশই সই করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ।
কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের বহু ক্লাবকে তাদের মানোন্নয়নের জন্য সরকারি অনুদান দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সরকারের এই ‘খয়রাতি’ নিয়ে বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই সরব। ‘ভুয়ো ক্লাবে’র নাম নথিবদ্ধ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে, এ অভিযোগও কম ওঠেনি। শংসাপত্রের বিনিময়ে কোনও ক্লাব ওই অনুদানের জন্য তাদের নাম নথিবদ্ধ করতে পারে ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরে। কিন্তু ওই ক্লাবকে কে শংসাপত্র দিলেন, তাঁর উত্তর মিলছে না।
এ বার আরামবাগ ব্লক এবং পুরসভা মিলিয়ে অনুদান পেয়েছে মোট ৫৭টি ক্লাব। তার মধ্যে তালিকার ৩৩ নম্বরে রয়েছে ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’। গত ১১ এপ্রিল ওই চেক তুলে নিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা নীতিশ। সোমবার নবপল্লিতে গিয়ে আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে ওই ক্লাবের খোঁজ করা হলে এলাকাবাসী আকাশ থেকে পড়েন। তাঁরা জানিয়ে দেন, ওই নামে কোনও ক্লাব নেই। নীতিশের বাড়ি ওই পাড়ার দুর্গামণ্ডপের কাছে। তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে, আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
নীতিশ বলেন, ‘‘আমি টাকাটা তুলেছি। এই নিয়ে দু’বার টাকা পেলাম।’’
আনন্দবাজারের প্রশ্ন, ক্লাবটা কোথায়?
নীতিশ: এটা ক্লাবের আর এক কর্মকর্তা পিন্টু কোনার বলতে পারবেন।
প্রশ্ন: কার শংসাপত্র পেয়ে আবেদন করেছিলেন?
নীতিশ: সে সব মনে নেই। দলের বিধায়ক, সাংসদ থেকে উঁচুতলার নেতারা সবাই তো দেন।
প্রশ্ন: আগের দু’লক্ষ টাকায় কী করেছেন? অডিট হয়েছিল?
নীতিশ: ও সব আর মনে থাকে! পিন্টু হয়তো বলতে পারবেন।
প্রশ্ন: এ বারের টাকায় কী করবেন?
নীতিশ: কিছু লোককে সাহায্য করব ভাবছি।
পিন্টু কোনার ওই এলাকারই বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘ক্লাবটা নেই। রেল স্টেশনের কাছে একটি দেবত্র জমিতে ক্লাবটা করতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। পুলিশ ভেঙে দিয়েছে।’’ পিন্টুও ‘ভুলে’ গিয়েছেন কার শংসাপত্রে অনুদান মিলেছে, কোথায় ক্লাবের অডিট হয়েছে।
ক্লাবটি যে ভুয়ো, তা শহরের তৃণমূল নেতারা অনেকেই স্বীকার করেছেন। পুর এলাকার প্রথম সারির এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, “ক্লাবের অনুদান পেতে হলে স্থানীয় বিধায়কের শংসাপত্র লাগে। এ রকম আরও ক্লাব বের হবে, যেগুলোর কোনও অস্তিত্বই নেই। এতে দলের নাম খারাপ হচ্ছে।”
আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার দাবি, “শংসাপত্র শুধু বিধায়ক দেন না, সাংসদও দেন। কেউ আবার জেলা সভাপতি বা মন্ত্রীর কাছ থেকেও শংসাপত্র নিয়ে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে কার শংসাপত্রের ভিত্তিতে এটা হয়েছে আমার জানা নেই। দল এবং সরকারের দেখা উচিত।” সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের দাবি, “আমি এ রকম কোনও শংসাপত্র দিইনি। আমরা সুপারিশ করলেও দফতর সেটা খতিয়ে দেখেই টাকা দেয়। এ ক্ষেত্রে তদন্তের জন্য মহকুমাশাসককে বলব।”
দলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব জানিয়েছেন, ক্লাব নেই, অথচ টাকা পেয়ে থাকলে বিষয়টা ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতর দেখবে। সমস্ত তথ্য পাঠানো হবে।