শ্রাবণী মেলার সময় নিমাইতীর্থ ঘাট বা বৈদ্যবাটি চৌমাথায় এখন আর বাড়তি ঘাম ঝড়াতে হয় না পুলিশকে।
সৌজন্যে পুরসভার সিভিক পুলিশ আর গ্রিন পুলিশ।
জঞ্জাল অপসারনের ক্ষেত্রে যে এই পুরসভার যে ‘বদনাম’ ছিল, তা-ও অনেকাংশে ঘুচে গিয়েছে বর্তমানে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশি বাজিয়ে জঞ্জাল সংগ্রহ করেন পুরকর্মীরা।
অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক চুল্লি হয়েছে।
দূরপাল্লার বাস টার্মিনাসের কাজ চলছে।
জল, আলো, রাস্তাঘাটের সমস্যা মিটেছে অনেকটাই।
উন্নয়নের ফিরিস্তি দেখলে এ বারের পুরভোটে বৈদ্যবাটিতে শাসক দলের নিশ্চিন্ত থাকারই কথা। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক বা কংগ্রেসের বিরোধীতা তো আছেই, সঙ্গে গলায় খচখচ করে বিঁধছে বিরোধী-কাঁটা। শাসক শিবিরে গুঞ্জন, সেই সব নির্দলকে ইন্ধন দিচ্ছে দলেরই একটি গোষ্ঠী। মরিয়া নির্দল প্রার্থীরা শাসক দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তো বটেই, সাংসদকে লক্ষ্য করেও ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না। সভায় শোনা যাচ্ছে কুকথা।
এমনিতে গত পাঁচ বছরে মোটের উপরে পুরসভার বেশ কিছু কাজে সন্তুষ্ট হলেও হলেও নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে অবশ্য পুর এলাকার সাধারণ মানুষ রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, বাম থেকে ডান কোনও শাসকই স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি এই সমস্যার। তা ছাড়া, যানজটের সমস্যাও বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন। বৈদ্যবাটি রেলগেটের উপরে উড়ালপুল তৈরি না হওয়ায় যানজটে নাভিঃশ্বাস ওঠে পুরসবাসীর।
বৈদ্যবাটি পুরসভায় ২২টি ওয়ার্ড (এ বার একটি বেড়েছে)। তার মধ্যে তৃণমূলের হাতে ছিল ১৩টি। সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেস প্রত্যেকে পায় ৩টি করে আসন। বিরোধীরা বলছে, গত পাঁচ বছরে পুর-কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য কোনও কাজই করেনি। রাজ্য ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা, বৈদ্যবাটির বাসিন্দা নরেন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বৈদ্যবাটির পাঁচটা ওয়ার্ডে রাজ্যসভার সাংসদদের টাকায় জলের পাম্প বসাতে হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থার হাল খুব খারাপ। শহরে ছোটদের জন্য পার্ক হয়নি। কাজ হয়নি, অথচ পুরকর বেড়েছে।’’ একই সুরে কংগ্রেস নেতা প্রিতম ঘোষের বক্তব্য, ‘‘পুরসভার কাজ বলে যা দেখানো হচ্ছে, তার অধিকাংশই হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে। আদপে কোনও কাজই হয়নি। বর্ষায় জমিদার রোড জলে ভাসে। শেওড়াফুলি হাটে ঢোকার আন্ডারপাসে জল জমে থাকে। নিয়মিত পরিস্কার হয় না। ওরা ট্যাক্স বাড়িয়েছে। অথচ রশিদ দেয়নি। তঞ্চকতা করেছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বিদায়ী পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নলকূপ বসানো হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা ভাল করার চেষ্টা করা হয়েছে। গঙ্গার ধারে সৌন্দ্যর্যায়ন হয়েছে। ত্রিফলা বসেছে। মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে পুরপ্রধান নিজে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেছেন। অজয়প্রতাপবাবুর ছায়াসঙ্গী এক তৃণমূলকর্মীর বক্তব্য, ‘‘উন্নয়ন তো আছেই, তা ছাড়াও পুর-এলাকার সবক’টি স্কুলে (১৪টি) নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সকলের থ্যালাসেমিয়া নির্নায়ক পরীক্ষা করানো হয়েছে দাদার উদ্যোগে। সমাজ থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্মূল করার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ কী কম কথা!’ তৃণমূল প্রার্থী গোরাচাঁদ শেঠ বা কল্যাণ সরকাররা বলছেন, ‘‘মোদ্দা কথা হল, শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটির মানুষ গত পাঁচ বছরে যা পেয়েছেন, আগে কখনও পাননি। আগামী পাঁচ বছরে তাঁদের প্রত্যাশা পূরমে তৃণমূলের ধারেকাছে কেউ আসবে না, তা-ও তাঁরা বিলক্ষণ জানেন। তাই বিরোধী বা নির্দলরা কি বললেন তাতে কিছু যায়-আসে না।’’
অজয়বাবু বলছেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে আমরা যখন দায়িত্ব নিই, পুরসভার ৪২ কোটি টাকা দেনা ছিল। সেই অবস্থাটা কিন্তু আমরা ক্রমশ কাটিয়ে উঠেছি। এর কৃতিত্ব কি বিরোধীরা নিতে চান?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘গত পাঁচ বছরে বিরোধীরা একটা স্মারকলিপিও দেননি পুরসভায়। এখন স্রেফ ভোটের রাজনীতি করার জন্য মিথ্যা বলছেন।’’ বিদায়ী পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, বৈদ্যবাটিতে উড়ালপুল বা শেওড়াফুলিতে আন্ডারপাস তৈরির জন্য তাঁরা কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু নানা কারণে তা হয়নি। আর, সেচ দফতরে বার বার আবেদন করেও বৈদ্যবাটি এবং ডিভিসি খাল সংস্কার না হওয়াতেই, জল জমছে এলাকায়।
জল অনুকুলে গড়াক, চাইছে সব পক্ষই।