হুমকি চিঠি হাতে রীতাদেবী । ছবি: তাপস ঘোষ
স্বামীর প্রাণনাশের হুমকি ও সেই সঙ্গে তাঁর জন্য সাদা থান। মঙ্গলবার বিকেলে চুঁচুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর উদ্দেশে পাঠানো এমনই একটি প্যাকেটকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। দলের এবং প্রার্থীর অভিযোগ, এটা সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদেরই কাজ। চুঁচুড়া থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই প্রার্থী। পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোথা থেকে এই চিঠি এসেছে তার খোঁজ চলছে।’’ যদিও বুধবার রাত পযর্ন্ত প্রেরকের কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ।
সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল। ওদের দলে যারা টিকিট পায়নি তারাই এ সবরে পিছনে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢাকতেই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।
পুলিশ ও প্রার্থীর পরিবার সূত্রে খবর, ডাকঘরের পিওন বিকেল বেলা এসে দিয়ে গিয়েছিল একটি বড় প্যাকেট। যাঁর নামে পাঠানো, চুঁচুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেই তৃণমূল প্রার্থী রীতা দত্ত তখন প্রচারের কাজে বাড়ির বাইরে। শাশুড়ি বেলারানি দেবী পিওনের হাত থেকে প্যাকেটটি নিলেও বৌমা না থাকায় তা খোলেননি। রাতে প্রচার সেরে বাড়িতে ফেরার পর খাম খুলে রীতাদেবী দেখেন একটি চিঠি ও সাদা থানা কাপড়। চিঠিতে লেখা, ‘তোর স্বামী বড় বাড়াবাড়ি করছে। ভোটের আগে কম না করলে এরপর তোকে এই সাদা থান পরতে হবে’। শুধু রীতাদেবীই নন, একই দিনে ওই এলাকারই আর এক তৃণমূল কর্মী জাভেদুল মজাহার ওরফে রাজেশের বাড়িতেও ডাকঘরের মাধ্যমে একটি চিঠি পৌঁছয়। রাজেশ সেই সময় বাড়ি ছিলেন না। তিনি রীতাদেবীর সঙ্গে প্রচারে বেরিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের বক্তব্য, চিঠিতে রাজেশকেও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠির বয়ানও প্রায় একই, ‘বাড়াবাড়ি করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে’। সমস্ত বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন রীতাদেবী। তিনি জানান, পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরে ফের তাঁর স্বামীকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এটা বিরোধী দলেরই কাজ। আমরা সাধারণ মানুষ। দলের নির্দেশেই এ বার প্রার্থী হয়েছি। বিরোধী দলের কিছু অসাধু মানুষের এতে অসুবিধা হচ্ছে। সে জন্যই আমার স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না। ভোটেও কোনওরকম ছোঁয়া লাগবে না। এখানকার মানুষ আমার পাশে রয়েছেন।’’ স্বামী স্বপন দত্ত বলেন, ‘‘স্ত্রী ভোটে প্রার্থী হওয়ায় বিরোধী দলের কিছু অসাধু মানুষ পথের কাঁটা দূর করতে এ ভাবে ভোট বানচাল করার চেষ্টা করছে। আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে। এ সব সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাজ। ওরা এলাকায় সন্ত্রাস করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
তবে প্রাণনাশের হুমকির পরেও যে এলাকা থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সেই চকবাজারে বুধবার সকালে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সভা করেন রীতাদেবী। সভায় তাঁর হুমকি চিঠি পাওয়ার কথাও জানান। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক তপন মজুমদারের কথায়, ‘‘সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ওদের দলের অস্তিত্ব প্রায় শেষ। এখন এ সব করে ভোট বানচালের চেষ্টা করছে।’’
বিধায়কের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রূপচাঁদ পাল বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল। শাসকদলের যারা এ বার টিকিট পায়নি তারাই বিক্ষুব্ধ নির্দল হয়ে দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এ সব করছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে না পেরে তৃণমূল আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে।’’