নষ্ট নীড় বাবুইয়ের

রবিবার বিদ্যুৎ দফতরের লোকজন তারে থাকা বাবুইয়ের বাসাগুলি ভেঙে দিয়েছেন। ছোট্ট পাখিগুলি সেই শোক ভুলতে পারছে না। সকাল থেকে সেই তারেই জটলা করছে।

Advertisement

সুব্রত জানা 

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০৪:২১
Share:

রবিবার ভেঙে ফেলার আগে যেমন ছিল বাবুই পাখির সংসার।

শেষ আশ্রয়টাও গেল!

Advertisement

তালগাছ, নারকেল গাছ আগেই গিয়েছে। শেষ আশ্রয় ছিল বিদ্যুতের তার। সেখান থেকেও ঠাঁইনাড়া হতে হল উলুবেড়িয়ার বেলতলার বাবুই পাখিদের।

রবিবার বিদ্যুৎ দফতরের লোকজন তারে থাকা বাবুইয়ের বাসাগুলি ভেঙে দিয়েছেন। ছোট্ট পাখিগুলি সেই শোক ভুলতে পারছে না। সকাল থেকে সেই তারেই জটলা করছে। কিছু পাখি ফের বাসা বাঁধার চেষ্টা করছে। ফের তা ভাঙা পড়বে কিনা, সে উত্তর না জেনেই।

Advertisement

আশ্রয়হীন হয়ে বাবুই প্রতিবাদ না-করলেও বিদ্যুৎ দফতরের ওই আচরণে পাখিপ্রেমী এবং পরিবেশবিদরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্মীদের কঠিন শাস্তির দাবিও তুলেছেন। বিদ্যুৎ দফতরের সাফাই, ওই এলাকায় বারবার শর্ট সার্কিটের সমস্যা মেটাতেই বাবুইয়ের বাসাগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

বছর ২০-২৫ আগেও বেলতলায় বহু নারকেল এবং তালগাছ ছিল। সেই সব গাছে বাস বাঁধত বাবুই। কিন্তু ঘরবাড়ি এবং কল-কলকারখানা গড়ে ওঠায় কোপ পয়েছে সেই সব গাছে। নামমাত্র দু’-একটি টিকে রয়েছে। বাবুই তাই ঘরছাড়া হয়ে মাঠের মাঝখান দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইনে বাসা বাঁধে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার লোকজন প্রচুর বাবুইয়ের বাসা ঝুলতে দেখছিলেন। কিন্তু রবিবার থেকে আর তা দেখা যাচ্ছে না। তারগুলিতে শুধু জড়িয়ে রয়েছে বাসার অবশেষ।

এ ভাবে বাসা ভাঙার জন্য বিদ্যুৎ দফতর কোনও অনুমতি নেয়নি, এ অভিযোগও তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের কঠিনতম শাস্তি দেওয়া উচিত। বন দফতরের অনুমতি না নিয়ে বা বাবুইয়ের জন্য বিকল্প বাসা বাঁধার ব্যবস্থা না করে কী করে তা ভাঙল বিদ্যুৎ দফতর? এটা উচিত হয়নি।’’ সুভাষবাবু আরও মনে করেন, ‘‘যে সব তারে বাবুইয়ের বাসা ছিল, সেই তারগুলিতে আচ্ছাদন (কভার) দেওয়া যেত। পরিবেশের স্বার্থে ওই তারের কাছে বিদ্যুৎহীন তারও লাগানো যেত।’’ পাখিপ্রেমী তথা চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় খাঁড়া বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীরাই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে পারেননি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’

বিদ্যুৎ দফতরের উলুবেড়িয়ার ডিভিশনাল ম্যানেজার নারায়ণ ভৌমিক স্বীকার করেছেন, বাবুইয়ের বাসা ভাঙার নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘১১ হাজার ভোল্টের তারে ওই বাসাগুলি ছিল। ফলে, বৃষ্টিতে ভিজে এক তারের বাসর সঙ্গে অন্য বাস লেগে মাঝেমধ্যেই শর্ট সার্কিট হচ্ছিল। সে জন্যই কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে দফতরের অনুমতি নিয়ে ওই চত্বরের বিদ্যুতের তারে ‘কভার’ দেওয়ার চেষ্টা করব।’’

বন দফতরের উলুবেড়িয়ার রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকার অবশ্য ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। কেন বন দফতরের অনুমতি ছাড়া বিদ্যুৎ-কর্মীরা বাবুইয়ের বাসা ভাঙলেন, তার তদন্ত হবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে তা বাবুইয়ের বোঝার কথা নয়। একরত্তি পাখিগুলো এখন নতুন আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement