Migrants

স্কুলের চেহারা বদলে দিলেন পরিযায়ীরা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,  সরকারের পক্ষ থেকে এই বিদ্যালয়ে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি করার পর জুজারসা এলাকার প্রায় চল্লিশ জন পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের পরিবার  নিয়ে এখানে নিভৃতবাসে আছেন।

Advertisement

সুব্রত জানা

পাঁচলা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০২:০৩
Share:

গাছ ও আগাছা কেটে পরিষ্কার করছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। —নিজস্ব িচত্র

বিদ্যালয়টি নিভৃতবাস কেন্দ্র হবে জেনে আপত্তি তুলেছিল গ্রামবাসীরা। প্রাক্তন ছাত্র ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোঝানোর পর তাঁরা রাজি হন। এদিকে নিভৃতবাসে থাকাকালীনই পরিযায়ী শ্রমিকেরা বদলে দিলেন বিদ্যালয় ভবনের চেহারা। আগাছা পরিষ্কার থেকে বিদ্যালয় ভবন সাফাই, সবই করলেন নিজের হাতে। তবে এ কাহিনির অন্য একটি দিকও আছে। এই শ্রমিকদের খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্ররা। এঁরা সকলে মিলে পারষ্পরিক নির্ভরতা এবং একজোট হয়ে লড়াইয়ের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত রেখেছেন বলেই অভিমত গ্রামবাসীদের। পাঁচলা জুজারসা পি এন মান্না ইনস্টিটিউশনের ঘটনায় খুশি সকলেই।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে এই বিদ্যালয়ে নিভৃতবাস কেন্দ্র তৈরি করার পর জুজারসা এলাকার প্রায় চল্লিশ জন পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের পরিবার নিয়ে এখানে নিভৃতবাসে আছেন। লকডাউনের জন্য স্কুল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। স্কুল চত্বর আগাছায় ভরে গিয়েছিল। অন্যদিকে আমপান ঝড়ে স্কুলের বেশ কয়েকটি গাছপালাও পড়ে যায়। এরপর পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেরাই স্কুল পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়েন।

নিভৃতবাস কেন্দ্র নোংরা, অপরিস্কার, খাবার পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ, এমন অভিযোগ পাঁচলা-সহ জেলার বিভিন্ন নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাওয়া গিয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশকে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। কিন্তু পাঁচলা জুজারসা পি এন মান্না ইনস্টিটিউটে দেখা গেল ব্যতিক্রমী চিত্র। নিভৃতবাস কেন্দ্রে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক বিজয় মান্না বলেন, “আমি এই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। যে স্কুল থেকে পড়াশোনা করে বড় হয়েছি, সেখানেই চোদ্দ দিন থাকতে হবে। তাই স্কুলকে নিজের বাড়ি মনে করেই পরিষ্কার করেছি।”

Advertisement

আর এক পরিযায়ী শ্রমিক দিলীপ পাত্র বলেন, “আমপান ঝড়ে স্কুলের অনেক গাছ পড়ে গিয়েছিল। স্কুল চত্বর পরিষ্কার করতে স্কুলের অনেক খরচ হত। তাই আমরা সকলে মিলে ঠিক করি, আমরাই গাছ কেটে পরিষ্কার করে স্কুলকে সাহায্য করব।”

পরিযায়ী শ্রমিকদের এই কাজে খুশি গ্রামবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ আক্তার আলি বলেন, “স্কুলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা সকালেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁরা নিজেরাই স্কুল সাফ রাখছেন। এটা অত্যন্ত খুশির খবর।”

পরিযায়ী শ্রমিকদের দু’বেলা খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্কুলের দুই প্রাক্তন ছাত্র বিনয় কোলে ও রোমজান আলি। বিনয়বাবু স্কুলের প্রাক্তন সভাপতি। তিনি বলেন, “এঁরা সকলে অনেক কষ্ট করে গ্রামে ফিরেছেন। তাঁদের কোনও রোজগার নেই। তাই তাঁদের খাবারের দায়িত্ব নিয়েছি।” একই কথা রোমজানেরও।

পাঁচলার বিডিও এষা ঘোষ বলেন, “প্রতিটা নিভৃতবাস কেন্দ্র যদি এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, তাহলে কোনও সমস্যাই হবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement