প্রতীকী ছবি
পুজোয় সবকিছু লাগামছাড়া হলে, সম্ভাব্য পরিস্থিতি কী হয়, সেই কথা ভেবে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে ছিল! দমবন্ধ অবস্থায় অপেক্ষা করছিলাম, কী হয়! হাইকোর্ট নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ করে দিল।
ব্যবহারিক জীবনে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এমনিতেই অনেক মানুষ মানছেন না। তার উপরে উৎসবে উন্মাদনার পরিস্থিতি, আবেগ এবং রাস্তায় মানুষের ঢল নামলে এটা নিশ্চিতভাবে করোনার পরিস্থিতিকে আরও ভয়বহতার দিকে ঠেলে দিত। সেই জায়গা থেকে দেখলে, হাইকোর্টের রায় যদি আংশিক ভাবেও পালিত হয়, তাতেও কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ততার শ্বাস বোধহয় আমরা ফেলতে পারব। রায় পুরোপুরি কার্যকর হলে তার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না।
মোহনবাগানের আই লিগ জয়ের উৎসবে রবিবার মাস্কবিহীন জনতার ভিড় দেখে বাঙালির আবেগের আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেটা কলকাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দুর্গাপুজো আপামর বাঙালির পুজো এবং গোটা রাজ্য জুড়েই উন্মাদনার আশঙ্কা ছিল। হাইকোর্টের রায়ে নিশ্চিত ভাবে পুলিশ-প্রশাসনের উপরে জরুরি দায়িত্ব বর্তেছে। তাঁরা তাদের যথেষ্ট করবেন, এমনটা আশা করাই যায়। ফলে, একটু হলেও এই উন্মাদনার উপরে যুক্তি এবং বোধবুদ্ধির রাশ টানা যাবে, এই আশায় বুক বাঁধছি।
করোনার সঙ্গে যে লড়াই, সেই লড়াইতে আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিলাম, আছি, আগামীতেও থাকছি। শুধু আমাদের এই লড়াইতে সাহায্যের জন্য সকলের কাছে আবেদন করব, ২০২০ সাল পৃথিবীর শেষ নয়, আগামীদিনে এমন উৎসবের অবসর আবার আসবে। আজকের জরুরি যে কাজ, করোনা নামক অতিমারিকে আমাদের দেশ, অঞ্চল থেকে বিদায় দেওয়া। সেই লড়াইতে একটু সহযোগিতা করুন। শুধু হাইকোর্টের নয়, নিজের বোধবুদ্ধি, যুক্তির নির্দেশ মেনে ঘরের ভিতরে থেকে স্বাস্থ্যবিধিগুলি পালন করে যেন এই উৎসবের মরসুমটা আমরা কাটাই। যাতে আগামীদিনের উৎসবগুলো আরও আনন্দের সঙ্গে পালন করতে পারি।
আমাদের সামনে হাতেগরম উদাহরণ রয়েছে কেরলের। যেখানে করোনার লড়াইতে অসম্ভব ভাল কাজ করে রোগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল। কিন্তু ওনাম উৎসবে আনন্দের আতিশয্য এই অতিমারি নতুন করে আবার এক তরঙ্গ নিয়ে ওই রাজ্যের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে। তাই, পশ্চিমবঙ্গে করোনার সঙ্গে যে লড়াই, তাতে অংশীদার হওয়ার জন্য শুধু আইনের নির্দেশ নয়, স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমাদের বিনীত আবেদন, দয়া করে এই উৎসবের মরসুমটায় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করবেন না।
করোনা ভিড় চায়। ভিড়ে করোনার থাবা একসাথে বহু মানুষকে গ্রাস করতে পারে। তাই, ভিড় করা নয়, উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া নয়, বিধি-নিষেধের মধ্যে থেকে আজকের আনন্দ নয়, আগামীর সুখ-শান্তিকে নিশ্চিত করুন। এই মূহূর্তে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর পুজোর পরে কোভিড-শয্যা বাড়ানো নিয়ে চিন্তায়। তার কারণ, এখন যা শয্যা নির্দিষ্ট রয়েছে, বাঁধনছাড়া আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলে, ওই শয্যায় স্থান সঙ্কুলান হবে না। অক্সিজেন সরবরাহে টান পড়বে, এমন আশঙ্কাও অমূলক লাগছে না।
তাই, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেই নির্দেশ সবাই প্রশাসনকে সাহায্য করে পালন করব, সমস্ত সহ-নাগরিক, সাথী এবং রাজ্যবাসীর কাছে একান্ত ভাবে এই আহ্বান জানাচ্ছি।