পরিবারের সঙ্গে সুমন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
চারজনের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। বাবা চাষের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য কয়েকজন কচিকাঁচাকে ছবি আঁকা শেখান। মা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। বোন খুবই ছোট। সারা মাস খেটে পাঁচলা শুভরআড়া গ্রামের সুমন মণ্ডলের বাবা রামপ্রসাদবাবুর রোজগার মাসে মেরেকেটে তিন-চার হাজার টাকা। অনটনের মধ্যে বড় হওয়া সুমন এ বার মাধ্যমিকে ৬৫৭ পেয়ে তাক লাগিয়েছে সকলকে। পাঁচলা শুভরআড়া হাইস্কুলের ছাত্র সুমনের ইচ্ছা, বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে সে।
রামপ্রসাদবাবু সকালে চাষের কাজ করেন। বিকালে শিশুদের ছবি আঁকা শেখান। ছেলের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা শুনে তার বাবার প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনায় অনেক খরচ। এই রোজগারে কী করে তা সম্ভব?’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘হাল ছাড়ব না। আরও পরিশ্রম করব। আধপেটা খেয়ে থাকব। তবু ছেলের ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা করব।’’ সুমনের মা তনুশ্রীদেবীর স্বপ্ন, ছেলে বড় হয়ে পরিবারের অভাব ঘোচাবে। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের রেজাল্ট-এ আনন্দ পেয়েছি । ওর পড়াশোনার জন্য দরকার হলে লোকের কাছে সাহায্য চাইব। যেটুকু গয়না আছে, তা বিক্রি করব। ও বড় হয়ে সংসারের অভাব ঘোচাবে। বোনের দায়িত্ব নেবে। ওর পড়াশোনার জন্য সব ত্যাগ করতে পারি।’’ চাষ করে যেটুকু চাল ঘরে আসে, তাতে সুমনদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের সংস্থান হয়ে যায়। আর রামপ্রসাদবাবু যা রোজগার করেন, তা খরচ হয়ে যায় ছেলের গৃহ-শিক্ষকের বেতন মেটাতে ও ছোট মেয়ের দুধ কিনতে। সুমনের বক্তব্য, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে। বাবা খরচ জোগাতে না পারলে টিউশন করে পড়ার খরচ জোগাড় করব।’’
গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিল সুমন। পঞ্চম শ্রেণি থেকে ক্লাসে প্রথম হয়ে এসেছে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ পাত্র বলেন, ‘‘দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে সুমন। ও অনেক বড় হবে। সুমন আমাদের গর্ব।’’