মৃত বাঘরোল। পাঁচলার জুজারসাহায়। —নিজস্ব িচত্র
পিটিয়ে মারা হচ্ছে একজোড়া বাঘরোল।
এ খবর পেয়ে আর ঘরে চুপ করে বসে থাকতে পারেনি সাঁকরাইলের ধূলাগড় গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণির সোহম নস্কর। গত বৃহ্স্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বন্ধুর সঙ্গে মোটরবাইকে পৌঁছে গিয়েছিল চার কিলোমিটার দূরের ঘটনাস্থল পাঁচলার জুজারসাহা কুলডাঙা দাসপাড়ায়। দু’টি রাজ্যপ্রাণীকে সে রক্ষা করতে পারেনি। কিন্তু তার প্রতিবাদে নড়ে বসেছে বন দফতর।
বন দফতরের উলুবেড়িয়া রেঞ্জ অফিসার সুকুমার সরকার জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ামাত্রই শনিবার দফতরের পক্ষ থেকে থানায় এফআইআর করা হয়। ওই এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দফতরের আধিকারিকরা। তবে, বাঘরোল দু’টির মৃতদেহ মেলেনি। এলাকার মানুষ মুখ খুলতে রাজি হননি। ওই এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বন দফতরের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ আর সোহম বলে, ‘‘আমার চোখের সামনেই একটি বাঘরোল পিটিয়ে মারা হল। অন্যটি আগেই মেরে ফেলা হয়েছিল। বাধা দিতে গিয়েছিলাম। ছবি তুলতেই কিছু লোকজন লাঠি নিয়ে আমাদের দিকে তেড়ে এল। তাই প্রাণ ভয়ে ফিরে আসি।’’
দেউলপুর হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সোহম। ছোট থেকেই জীবজন্তু ভালবাসে। টিভিতে জীবজন্তুর ছবি দেখলে ঠায় বসে থাকে। জীবজন্তু নিয়ে পড়াশোনাও করে। বন দফতরের বিভিন্ন প্রচারে সে জানতে পারে, বাঘরোল রাজ্যপ্রাণী। তাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কিছুদিন আগেই বন দফতরের একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিল সে।
তাই প্রাণ বাঁচাতে বৃহস্পতিবার ফিরে এলেও চুপ করে বসে থাকেনি ছেলেটি। সে বলে, ‘‘শুক্রবার সকালে অনেক চেষ্টা করে প্রাণিসম্পদ ভবনে পুরো বিষয়টি জানিয়ে ছবি দিয়ে ই-মেল করি।’’
সোহমের এই প্রতিবাদকে কুর্নিশ জানিয়েছেন গ্রামীণ হাওড়ার ‘পরিবেশ যৌথ মঞ্চ’-এর সম্পাদক শুভদীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ হাওড়ায় পিটিয়ে বাঘরোল হত্যার নজির রয়েছে। এরা আমাদের পরিবেশের অঙ্গ। বাঘরোল বাঁচিয়ে রাখা দরকার। সোহমের মত ছোট ছেলে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবু ও চেষ্টা করেছে। ওর সাহসের প্রশংসা করতেই হয়।’’