গভীর রাতে বাজারের ব্যাগ হাতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েক জন যুবক। এক ঝলকে দেখে তেমন কিছু বোঝা না গেলেও এরাই আখেরে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুলিশের। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের রাজমিস্ত্রি বা রান্নার লোক বলে পরিচয় দেওয়া ওই যুবকদের সঙ্গের ব্যাগ থেকে মিলছে লোহার রড, ধারালো অস্ত্র, দড়ি, তালা কাটার যন্ত্র এরকমই আরও অনেক কিছু।
আদতে তারা চোর। রাতের শেষ লোকাল ট্রেন ধরে নামছে স্টেশনে। কাজ শেষে ফিরে যাচ্ছে ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে। এ হেন চোরদের ধরতে রাতে ও ভোরে এলাকার বিভিন্ন স্টেশনে লুকিয়ে বসে থাকছে পুলিশও। বালি-বেলুড়-নিশ্চিন্দার স্টেশনগুলিতে এমন ভাবেই চোরেদের উপর নজরদারি শুরু করেছে স্থানীয় থানা এবং হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনী।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ধরাও হচ্ছে চোরের দলকে। কয়েক মাস ধরে লাগাতার নজর রাখায় চোরেদের কাণ্ডকারখানা কিছুটা হলেও কমেছে। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আগের থেকে চুরির সংখ্যা এখন অনেক কম। চোরেদের আসা-যাওয়ার পথে নজরদারি থাকায় তারা আর এলাকায় ঢুকতে পারছে না।’’
পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, এলাকার কয়েকটি চুরির কিনারা করতে গিয়েই রাতের শেষ ও ভোরের লোকাল ট্রেনের রহস্য সামনে এসেছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, মূলত হুগলির চাঁপদানি, রিষড়া, ডানকুনি, চন্দননগর, শ্রীরামপুর থেকে হাওড়া ডিভিশনের রাতের শেষ লোকাল ধরে বালি, বেলানগর, বেলুড় এবং শিয়ালদহ ডিভিশনের রাজচন্দ্রপুর, বালিঘাট, বালি হল্ট স্টেশনে এসে নামছে চোরের দল। রাতে ফাঁকা বাড়ি বা দোকানে চলে ‘অপারেশন’।
কয়েক মাস আগে টালিগঞ্জে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে ধৃত যুবককে তদন্তের স্বার্থে বালি থানার পুলিশ নিয়ে আসে। যুবককে জেরা করে জানা যায়, সে আসলে বিহারের বাসিন্দা হলেও ডানকুনিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। প্রতিদিন রাতে সে দলবল নিয়ে শেষ লোকাল ট্রেন ধরে বালি, বেলুড় আসত। বালির বাসিন্দা এক শিক্ষকের ফাঁকা বাড়িতে তারাই চুরি করেছিল বলে জেরায় স্বীকারও করে ওই যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে ওই সব দুষ্কৃতীর দল হুগলির বিভিন্ন জায়গায় এসে রেল লাইনের ধারের ঝুপড়ি বা বস্তি এলাকায় ঘর ভাড়া নেয়। এলাকায় নিজেদের পরিচয় দেয় রাজমিস্ত্রি, জোগাড়ে বা মুটেওয়ালা হিসেবে।
চোরেদের উপর নজর রাখতে বালি, বেলুড়, নিশ্চিন্দা থানার গাড়ি এলাকায় ঘুরছে। রাস্তায় সন্দেহজনক লোকজন যেতে দেখলে চলছে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ। থানার সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী শেষ ট্রেনের সময় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলে যাচ্ছে স্টেশনের সামনে। ভোরের প্রথম ট্রেনের সময়েও তারা নজর রাখছে স্টেশনে। পুলিশ জানায়, শুধু চোরই নয়, ভোরের প্রথম ট্রেনে নজরদারি চালানোয় আনাজের ঝুড়িতে চোলাই আমদানিও বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।