উলুবেড়িয়ায় বন্ধের সমর্থনে মিছিল। ছবি: সুব্রত জানা
১০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের ডাকা বৃহস্পতিবারের বন্ধে কার্যত অচল হয়ে গেল গ্রামীণ হাওড়া। সকাল থেকেই বন্ধ থাকে বেসরকারি বাস পরিষেবা। অটো, ছোট গাড়ি, ট্রেকার চলাচলও বন্ধ ছিল। সরকারি বাস এবং ট্রেন চললেও তাতে যাত্রী ছিল হাতেগোনা। বহু জায়গায় টোটোর সংখ্যাও ছিল কম। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। সকালের দিকে কোথাও কোথাও ব্যাঙ্ক খুললেও বেলার দিকে সেগুলি বন্ধ করে দেন ধর্মঘটীরা। কোনও কোনও ব্যাঙ্ক আংশিক খোলা থাকলেও কর্মিসংখ্যা ছিল নামমাত্র। ফলে, পরিষেবা ব্যাহত হয়।
সকাল থেকেই বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা এবং উদয়নারায়ণপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড ছিল শুনশান। দু’একটি রুটের বাস চালানোর চেষ্টা হলেও বাধা দেওয়া হয়। উলুবেডিয়াতে যাত্রী নামিয়ে বাসের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাস যাতে ঢুকতে বা বেরোতে না-পারে, সে জন্য আমতার কলাতলা মোড়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেন ধর্মঘটীরা।
জেলা বাস-মালিক সংগঠনের সভাপতি অসিত পণ্ডিত বলেন, ‘‘আমতা থেকে বাস চালাতে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।’’ ধর্মঘটপন্থীদের পাল্টা দাবি, তাঁরা কাউকেই বাধা দেননি। চালক-কন্ডাক্টররা স্বেচ্ছায় বাস চালাননি।
তবে, ব্লক অফিস এবং অন্যান্য রাজ্য সরকারের অফিসগুলিতে হাজিরা স্বাভাবিকই ছিল বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘অন্যান্য দিনের মতোই হাজিরা ছিল অফিসগুলিতে। ট্রেন এবং সরকারি বাস চলেছে। ফলে, অফিস আসতে কারও অসুবিধা হয়নি।’’
এ দিন সকাল থেকেই বন্ধের সমর্থনে মিছিল ও পিকেটিং করেন বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরা। বাগনান, শ্যামপুর, উলুবেড়িয়া, জয়পুর প্রভৃতি জায়গায় মিছিল হয়। বাগনান এবং উলুবেড়িয়ায় তিন জায়গায় মুম্বই রোড অবরোধ করা হয়। কুলগাছিয়া এবং উলুবেড়িয়ায় রেল অবরোধ করা হয়। কোথাও অবশ্য অবরোধ মিনিট পনেরোর বেশি চলেনি।
এ দিন থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সব ট্রেনই চলেছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ। বাগনান-ধর্মতলা, ধর্মতলা-গাদিয়াড়া, আমতা ধর্মতলা প্রভৃতি রুটের সিটিসি বাস চলাচল করেছে।
বন্ধ সফল বলে দাবি সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিক এবং কৃষকদের আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের উপরে যে ফিরে আসছে, এই ধর্মঘটের সাফল্যে সে কথাই প্রমাণিত হল। আমরা শ্রমিক-কৃষকদের কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলির কথা বোঝাতে পেরেছিলাম। তাঁরা নিজেরই ধর্মঘটে শামিল হন। আমরা ঠিক এটাই চেয়েছিলাম।’’
পক্ষান্তরে, বন্ধ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি বিজেপি ও তৃণমূলের। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। মানুষ আর বন্ধ সমর্থন করেন না।’’