জুটমিলে শ্রমিকের অপমৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য
jute mill

মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ

শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হলেও কেউ আসেননি বা যোগাযোগ করেননি। সঞ্জয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করেননি তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:২৯
Share:

কান্না: শোকার্ত গোন্দলপাড়া জুটমিলের মৃত শ্রমিকের পরিজনেরা (বাঁ দিকে)। মৃত সঞ্জয় দাস (ডান দিকে)। ছবি: তাপস ঘোষ।

প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল। মিলের ‘পাটঘর’ বিভাগের শ্রমিক সঞ্জয় দাস (৪০) দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছিলেন। গত নভেম্বরে মিল খোলায় স্বস্তি পেয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু দু’মাসেই ফের আঁধার নামল ওই পরিবারে।

Advertisement

শনিবার গভীর রাতে মিলে খাওয়ার সময় পাটের গাঁট চাপা পড়ে মৃত্যু হল সঞ্জয়ের। মিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে এবং সঞ্জয়ের পরিবারের একজনকে মিলে কাজ, তাঁদের মিলের আবাসনে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে ওই রাত থেকে রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান অন্য শ্রমিকেরা। গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

দুপুরে মিল কর্তৃপক্ষ পুলিশ, প্রশাসন এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

Advertisement

ঘটনার জেরে এ দিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। দুর্ঘটনার পরে অসহযোগিতার অভিযোগ মানতে চাননি মিলের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। খবর পেয়ে রাতেই আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু করার ছিল না। মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে মৃতের পরিবারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বাকি দু’টি দাবি মানা হবে।’’

সিটু-র হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিরালাল সিংহ বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর মৃত শ্রমিক পরিবারের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

মৃতের স্ত্রী ফুলন বলেন, ‘‘প্রায় আড়াই বছর খুব কষ্টে সংসার চালাতে হয়েছে। মিল চালু হতে কিছুটা ভাল ছিলাম। কিন্তু সুখ সইল না। এরপরে কী হবে, ভাবতে পারছি না।’’

মিল সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয় স্ত্রী এবং মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে গোন্দলপাড়ার মালাপাড়া এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। ১৫ বছর ধরে তিনি মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন।

শনিবার রাত ২টো নাগাদ তিনি খেতে বসতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। আওয়াজ পেয়ে অন্য শ্রমিকেরা এসে পাটের গাঁট সরিয়ে তাঁর মৃতদেহ দেখতে পান।

শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কথা জানানো হলেও কেউ আসেননি বা যোগাযোগ করেননি। সঞ্জয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করেননি তাঁরা। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ দেহ উদ্ধারে যায়। কিন্তু শ্রমিকেরা বাধা দেন। শুরু হয় বিক্ষোভ। এর জেরে কারখানা চত্বরে উত্তেজনা ছিল।

রবিবার সকাল থেকে শ্রমিক মহল্লা থেকে বহু মানুষ এসে বিক্ষোভে শামিল হন। সঞ্জয়ের এক সহকর্মী বলেন, ‘‘রাতে দুর্ঘটনা ঘটার পরে কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। বন্ধ থাকাকালীন কত শ্রমিকের মৃত্যু হল। কর্তৃপক্ষ তাঁদের পরিবারের জন্য কিছু করলেন না। এ ভাবেই চলছে। এ বারও বিক্ষোভ না-হলে সঞ্জয়ের পরিবার কিছু পেত না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement