প্রতীকী ছবি।
ফের এ বছর আরামবাগের ‘ভুয়ো’ ক্লাবের নামে সরকারি অনুদান বরাদ্দ হয়েছে। তদন্ত চলায় সেই টাকা তোলার জন্য কাউকে আবেদনপত্র দেওয়া হবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা। এ বার আগের তিন বছরে ওই ‘ভুয়ো’ ক্লাবের নামে বরাদ্দ মোট চার লক্ষ টাকা উদ্ধারেরও দাবি উঠল।
আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ‘নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ’ নামে কোনও ক্লাবের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি এলাকাবাসীর। গত বছরের এপ্রিলে তাঁরা জানতে পারেন, ওই ক্লাবের নামে বরাদ্দ হওয়া সরকারি অনুদানের এক লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা নীতীশ ভট্টাচার্য। এ নিয়ে নানা মহলে তাঁরা অভিযোগ জানান। তদন্তে নামে জেলা যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতর। ন’মাসেও তদন্তের কিনারা হয়নি। এর মধ্যেই এ বছরের কিস্তির এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে ওই ক্লাবের নামে।
আরামবাগের কোন কোন ক্লাব ওই অনুদান পাবে, ক্রীড়া দফতরের এ সংক্রান্ত তালিকা এসেছে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়কের হাতে। সেই তালিকাতেই নাম রয়েছে ওই ক্লাবের।
বিধায়ক ওই টাকা তোলার জন্য কাউকে আবেদনপত্র দেওয়া হবে বলে জানানোয় নবপল্লির বাসিন্দারা খুশি। তাঁদের মধ্যে অসীম শর্মা এবং কাশীনাথ দেবনাথ বলেন, “আমাদের একটাই দাবি। শুধু এ বারের টাকা আটকালেই হবে না। ওই ক্লাবের নামে আগের তিন বছরের সরকারি অনুদানের চার লক্ষ টাকা উদ্ধারও করতে হবে।”
বিধায়ক এ বারে টাকা আটকাতে উদ্যোগী হলেও গোটা পর্বে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘বিধায়কের সুপারিশেই ভুয়ো ক্লাব অনুদান পেয়ে আসছে। এখন বিরোধীদের বিক্ষোভ, স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ, আর সামনে বিধানসভা ভোট— সব মিলিয়ে চাপে পড়ে তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।”
সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিধায়কের ভূমিকা রহস্যজনক। তাঁর অজান্তে এই ক্লাব এতদিন ধরে টাকা পেতে পারে না। আমরা প্রথম থেকে বলছি, ভুয়ো ক্লাব নিয়ে তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে। যে ক্লাবের অস্তিত্ব নেই, সামাজিক কাজকর্ম নেই, সেই ক্লাবের নামে ফের টাকা অনুমোদন হয় কী করে?”
বিরোধীদের সমালোচনা নিয়ে বিধায়ক বলেন, “আমি গোড়া থেকেই বলছি, আমরা স্বচ্ছতা চাই। ভুয়ো নথিপত্র দাখিল করে আমাদের কাছে কেউ শংসাপত্র নিয়ে থাকলে সেটা জানা দরকার। ভুয়ো প্রমাণ হলে পরবর্তী অনুদান বন্ধ করা হবে। আগের পাওয়া অনুদানের টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।”
যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও ক্লাবের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুপারিশ করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক। সেই সুপারিশ সরাসরি রাজ্যে জমা পড়ে। সেখান থেকেই বাছাই হয়ে অনুমোদন হয়। খালি কোচিং ক্যাম্পগুলির ক্ষেত্রে দফতরকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়। ওই দফতরের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, খেলার মান উন্নয়নের নাম করে বহু ভুয়ো ক্লাবকে অনুদান পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। দফতরকে অন্ধকারে রেখে পুরো প্রক্রিয়া হয় শাসক দলের অন্দরে।
বেশ কিছু ভুয়ো বা অযোগ্য ক্লাব যে সরকারি অনুদান পেয়ে যাচ্ছে, তা স্বীকার করেছেন গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারও। তাঁর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্য মহৎ। আমরাই হয়তো সব কিছু খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।” গত তিন বছরে তিনি গোঘাটের পাঁচটি ভুয়ো ক্লাবকে চিহ্নিত করে অনুদান বন্ধ করেছেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বলেও মানসবাবু জানান।