সচল: শুক্রবার তখনও বন্ধ। বাউড়িয়ার রাস্তায় লরি, ট্রাকের পাশেই চলছে ঘোড়ায় টানা গাড়ি। নিজস্ব চিত্র
সাতসকালেই চন্দননগর আদালতে ফিসফিস আইনজীবীদের মধ্যে। ঘড়ির কাঁটা তখনও সাড়ে ১০টা ছোঁয়নি। অথচ, সেরেস্তায় হাজির এক দুঁদে আইনজীবী। তিনিই এই গুঞ্জনের লক্ষ্য— চন্দননগর পুরসভার সিপিএমের বিরোধী দলনেতা রমেশ তিওয়ারি।
বামেদের ডাকা ৬ ঘণ্টার বন্ধ চলাকালীন কর্মস্থলে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে জোর আলোচনা চলল সারাদিন। তবে, শুধু রমেশবাবু নন, সিপিএমের অনেক নেতাকেই এ দিন হাটে-বাজারে দেখা গিয়েছে। কেউ নিজের দোকান সামলাতে ব্যস্ত, কেউ বাজার করতে।
বন্ধের কর্মনাশা সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা এ রাজ্যে নতুন নয়। তা বলে দলের নেতাই সকাল সকাল কর্মস্থলে?
প্রশ্ন শুনেই রমেশবাবুর জবাব, ‘‘তৃণমূল যে ভাবে কাজ করছে, তার প্রতিবাদে আমরা বন্ধ ডেকেছি। অন্য দল তা সমর্থন করেছে। কোর্টে বসে আছি। কোনও কাজ করছি না। ১২টার পরে কাজ থাকলে করব।’’
বন্ধের ব্যাপারে মানুষকে বোঝানোও তো নেতাদের কাজ? রাস্তায় না থেকে আপনি কর্মস্থলে কেন?
রমেশবাবুর যুক্তি, ‘‘বোঝানোর কাজ তো গতকাল করেছি। বন্ধের দিন কী বোঝাব? দুম করে দোকানপাট বন্ধও করতেও পারব না। প্রচার, মিছিল সবই হয়েছে। এখন মানুষের উপরেই ছেড়ে দিয়েছি।’’
ঘটনা হচ্ছে, বাম নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করছেন, চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন বন্ধ ডাকা অনুচিত হয়েছে। চন্দননগরেরই এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘পার্টির নির্দেশ অনুযায়ী বন্ধের সমর্থনে প্রচার করেছি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই সময়টা বন্ধ না ডাকলেই হত। আজ নীলষষ্ঠী। কত মানুষ গঙ্গায় যাচ্ছেন। ফলমূল কেনাকাটা থাকে। দোকানপাট বন্ধ থাকলে তাঁদের অসুবিধা তো স্বাভাবিক। তা ছাড়া চৈত্র সেলের বাজারও আছে।’’
সকালে পোলবার মহানাদ পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী বরুন দাসের রঙের দোকান খোলা ছিল। তবে বিক্রিবাটা যে হয়েছে, সে কথা স্বীকার করেননি বরুণবাবু।
তিনি বলেন, ‘‘এক দিন পরেই পয়লা বৈশাখ। তাই কয়েক ঘন্টার বন্ধের সুযোগে দোকান পরিস্কার করা হচ্ছিল।’’ সকালে পান্ডুয়া স্টেশনে সিপিএমের এক তাবড় নেতাকে থলে হাতে ঘুরতে দেখা গেল। জিরাটের এক তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘সিপিএম সমর্থকরাও দিব্যি দোকানপাট খুলেছিলেন।’’
সাধারণ মানুষ অনেকেই জানিয়ে দিচ্ছেন, বন্ধ সমর্থন করেন না। যদিও যে কারণে বন্ধ (নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে বিরোধীদের বাধা, সন্ত্রাস) তাকে সমর্থন করেন। পুরশুড়ার জঙ্গলপাড়া গ্রামের সঞ্জয় হাটি আরামবাগে মহকুমাশাসকের দফতরে এসেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “বন্ধের ইস্যু একশোবার সমর্থন করি। কিন্তু সে জন্য প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষতি করে ঘরে বসে থাকতে বললে মানব না।’’
সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া (২) কমিটির সম্পাদক উত্তম সামন্ত অবশ্য বলেন, “আমাদের ইস্যু মানুষ সমর্থন করেছেন। সেটাই বন্ধের সাফল্য। কারও দৈনন্দিন কাজ আটকাতে এই বন্ধ নয়।’’
পান্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের কথায়, ‘‘শাসক দল নির্বাচন নিয়ে যে প্রহসন করছে, তার প্রতিবাদ করা হচ্ছে। মানুষ শান্তি চায়। জোর করে বন্ধ করা হয়নি।’’
এ ব্যাপারে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের টিপ্পনি, ‘‘ওরা তো পরে ভুলস্বীকার করতে অভ্যস্ত। মানুষের কাছে ধাক্কা খেয়ে বন্ধের ক্ষেত্রেও ওদের বিলম্বে বোধোদয় হবে।’’