বিপজ্জনক: জীর্ণ সেতুতে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। পাশেই অসমাপ্ত সেতু (চিহ্নিত)। ছবি: দীপঙ্কর দে
সেতু বেহাল, মানছে সব পক্ষ। কিন্তু সংস্কারে উদ্যোগ কই?
শেওড়াফুলির কাছে দিল্লি রোডে নামহীন সেতুটির নীচ দিয়ে গিয়েছে পূর্ব রেলের হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার রেললাইন। কিন্তু না রেল, না রাজ্য সরকার— দু’পক্ষের কেউই এখনও ওই সেতু সংস্কারে উদ্যোগী হল না। অথচ, সেতুটি যে বিপজ্জনক এবং যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সে কথাও মানছেন রেল ও রাজ্যের পূর্ত দফতরের কর্তারা। ইতিমধ্যে মাস কয়েক আগে সেতুটির ফুটপাতের স্ল্যাব সরে গিয়ে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। এক মোটরবাইক আরোহী রাতের অন্ধকারে সেই গর্তে পড়ে জখম হন। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও লেগে রয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই ওই পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কিন্তু দায় কার?
রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘১৯৫২ সালে ওই সেতু রেলই বানায়। কারণ, নীচে রেললাইন রয়েছে। কিন্তু উপরের সেতুর সড়ক তো রাজ্য সরকারের। তাই রাজ্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা বহুবার হুগলির জেলাশাসকের সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। কাজ হয়নি। সেতুটি কিন্তু বিপজ্জনক।’’
পক্ষান্তরে, জেলা পূর্ত দফতরের দাবি, এই ধরনের সেতু তৈরির ২৫ বছরের মধ্যে সংস্কার করা জরুরি। কারণ, নীচে রেলপথ রয়েছে। ফলে, সেতুতে কম্পনের মাত্রা সাধারণ সেতুর চেয়ে বেশি হয়। রেলকেই সেতু সংস্কার করতে হবে।
শেষ কবে সেতুটি সংস্কার হয়েছিল, সে সংক্রান্ত কোনও তথ্য দিতে পারেনি হুগলি জেলা প্রশাসন। তবে, জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই সেতুর বিষয়ে পূর্ত দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠাব। রিপোর্ট পেলে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’ পূর্ত দফতরের হাইওয়ে বিভাগের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য মানছেন, ‘‘ওই সেতুটির দায়িত্ব রাজ্য বা কেন্দ্রের মধ্যে কাউকে নিতেই হবে। অকারণ দড়ি টানাটানির ফলে মানুষের বিপদ বাড়ছে। সেতুটির যা হাল, যে কোনও সময় এর কোনও অংশ খসে পড়তে পারে। সেই সময় নীচ দিয়ে ট্রেন গেলে বড় বিপদ ঘটে যাবে।’’
৫২ ফুট লম্বা এবং ২৪ ফুট চওড়া সেতুটির চারদিক খুঁজেও কোনও নামফলক মেলেনি। বছর দুয়েক ধরে এই সেতুতে লরি-ট্রাকের মতো ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। লাগানো রয়েছে ‘হাইট বার’। কিন্তু তাতেও দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না। রাজ্য সরকার বর্তমানে দিল্লি রোড সম্প্রসারণের কাজ করছে। তার অঙ্গ হিসেবে এই সেতুটির পাশে আর একটি সেতু তৈরি হচ্ছে। সেতুটি সম্পূর্ণ হলে পুরনো সেতুটির চাপ কমবে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু সেই সেতু তৈরির কাজও ঢিমেতালে চলছে বলে অভিযোগ।
ওই সেতুর কাছে পিয়ারাপুর এলাকার এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘সরকার কি বড় দুর্ঘটনার অপেক্ষায় আছে? আমরা সেতুটির বিষয়ে পুলিশ এবং পূর্ত দফতরকে জানিয়েছি। অথচ কাজের কাজ হচ্ছে না।’’ স্থানীয় কংগ্রেস নেতা প্রীতম ঘোষ বলেন, ‘‘একাধিকবার রেলকে চিঠি দিয়েছি। কাজে জটিলতা থাকলে দ্রুত সমাধান করা হোক।’’