দোষী: রায় শোনার পর সুলতান। নিজস্ব চিত্র।
বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়ায় কোন্নগরের যুবতী শুভলগ্না চক্রবর্তীকে গুলি করে খুনের দায়ে তাঁর স্বামী শেখ সুলতান আলিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত।
বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুর আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মহানন্দ রায় ওই সাজা শোনান। ঘটনার এক বছর চার মাসের মধ্যেই মামলাটির নিষ্পত্তি হল। আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের লোকেরা। শুভলগ্নার বাবা তুষার চক্রবর্তী এবং তাঁর আত্মীয়েরা এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তুষারবাবু বলেন, ‘‘রায়ে আমি খুশি। দ্রুত রায় ঘোষণা হওয়ায় বিচারকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এ জন্য সরকারি আইনজীবী এবং পুলিশের তদন্তকারী অফিসারকেও ধন্যবাদ। তদন্তকারী অফিসার অত্যন্ত দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন।’’ আদালতে আগাগোড়া সুলতান নির্লিপ্ত ছিল। রায় ঘোষণার পরে আদালত থেকে বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ‘‘আদালতের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর তেত্রিশের শুভলগ্না রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশ করেছিলেন। গত বছরের ১২ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি খুন হন। তাঁর বাবা তুষারবাবু এবং মা শুভ্রাদেবী জখম হন। তুষারবাবুর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল উদ্ধার হয়। সুলতানের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা থেকে খুনে ব্যবহৃত সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার হয়। শুভলগ্নাদের বাড়ির দেওয়ালে রক্তমাখা আঙুলের ছাপ ছিল। ওই ছাপ যে সুলতানেরই, তা প্রমাণিত হয়। বুধবার সুলতানকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক মহানন্দ দাস।
শুভলগ্না চক্রবর্তী
মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণকুমার আগরওয়াল জানান, কোন্নগরের করাতিপাড়ার যুবক সুলতান প্রায় জোর করেই স্থানীয় অলিম্পিক মাঠের কাছে শ্রীনাথ ঘোষ সরণির বাসিন্দা শুভলগ্নার সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছিল। অবশ্য তাঁরা সংসার করেননি। শুভলগ্না ওই রেজিস্ট্রি বাতিলের আবেদন জানিয়ে আদালতে মামলা করেন। সুলতান অবশ্য শুভলগ্নাকে ছাড়তে রাজি ছিল না। আদালতের রায় শুভলগ্নার দিকে যাওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে সুলতান ধারণা করেছিল। তাই চূড়ান্ত রায়ের দিন পনেরো আগে সে পরিকল্পনা করে তাঁকে খুন করে।
তুষারবাবু জানান, ওই সন্ধ্যায় ( ১২ জুলাই, ২০১৮) কাছেই ভাইয়ের বাড়ি থেকে তাঁরা ফিরছিলেন। তিনি শুভলগ্নার পিছনে ছিলেন। সুলতান কাছেই লুকিয়ে ছিল। শুভলগ্না দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকতেই সুলতান তুষারবাবুকে সজোরে ধাক্কা মারে। তার পরে শুভলগ্নার পিঠে গুলি করে। শুভলগ্না পড়ে গেলে বন্দুকের বাট দিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে দেয়। তুষারবাবু এবং শুভ্রাদেবীরও মাথা ফাটিয়ে দেয় বন্দুকের বাটের আঘাতে। চিৎকার শুনে তুষারবাবুর ভাই দীপক চক্রবর্তী বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে তাঁকে ধাক্কা মেরে সুলতান পালায়। ঘটনাস্থলেই শুভলগ্না মারা যান।