বকখালির সৈকত। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্র রয়েছে। তা সৈকত থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে। বড়রা কষ্ট করে হেঁটে সমুদ্রে পৌঁছতে পারলেও কচিকাঁচারা সমস্যায় পড়ছে!
বকখালি সমুদ্রে সৈকত লাগোয়া বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে চর পড়ে গিয়েছে। ফলে এখন বকখালি পিকনিক স্পট আকর্ষণ হারাচ্ছে। দ্রুত চর কেটে পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকার থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ।
পুজোর পরেই হাল্কা ঠান্ডা আবহাওয়ায় পিকনিকের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। সে জন্য বকখালিতে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনাও। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকেরা পিকনিক করতে আসা শুরু করে দিয়েছে। তা ছাড়া কলকাতা থেকে বকখালির দূরত্বও কম। তাই এই সময় এখানে ভিড় বেশি হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে প্রায় দু’কিলোমিটার সমুদ্রে চর পড়ে গিয়েছে। ফলে মানুষকে অনেকটা পথ হেঁটে সমুদ্রে স্নান করতে যেতে হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ভরা অমাবস্যা বা পূর্ণিমার কোটালে সমুদ্রের জল এতটাই নেমে যায় তখন আরও এগিয়ে গিয়ে তবেই সমুদ্রে নামা যায়। সৈকতের সামনে প্রায় ৫০ মিটার সরু লম্বা খালও তৈরি হয়েছে। ওই খালই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার থেকে বকখালি পিকনিক স্পটের কোনও উন্নয়ন করা হচ্ছে না। সৈকতে নামার এক দিকে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। ডান দিক বরাবর আলোর ব্যবস্থা থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। ফলে সন্ধ্যা নামলেই নেমে আসে অন্ধকার। বছর কয়েক আগে সমুদ্র সৈকত নজরদারি করার জন্য বিদ্যুতের খুঁটিতে সিসি টিভি লাগানো হয়েছিল। তাও বর্তমানে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সৈকতের ডান দিকে সরকারি প্রায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে পর্যটকদের শৌচালয় ও খাবারের জন্য ভবন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্ত তা আজও চালু করা যায়নি। সমুদ্র সৈকত জুড়ে পড়ে রয়েছে আবর্জনার স্তূপও।
পর্যটকেরাও বকখালিতে গিয়ে খুব একটা খুশি নন। তেমনটাই জানালেন কলকাতার বাসিন্দা ভূবণেশ্বর ওঝা। তিনি ও তাঁর পরিবার বকখালিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বকখালিতে আগেও এসেছি। তবে বকখালি আর আগের বকখালি নেই। বছর দশেক আগে পর্যন্ত সৈকত লাগোয়া ছিল সমুদ্র। কত ভাল লাগত। কিন্তু এখন সমুদ্রের কাছে যেতে হলে অনেকটা পথ হাঁটতে হচ্ছে।’’
অথচ ওই বকখালি পিকনিক স্পটকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষের সংসার চলে। সৈকতে রয়েছে প্রায় ১৫০টি দোকান। তা ছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছে থাকার হোটেল। স্থানীয় বকখালি সৈকত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সদস্য পূর্ণচন্দ্র কুঁইতির অভিযোগ, এই পর্যটক কেন্দ্রের উন্নয়নের বিষয়ে সরকার উদাসীন। এখানে নেই কোনও পার্ক। তাঁর কথায়, ‘‘এ বিষয়ে প্রশাসনিক সভায় একাধিকবার জানিয়েছিলাম। সৈকতের সামনে থেকে সোজা সমুদ্র পর্যন্ত চর কাটার ব্যবস্থা হোক। তবেই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ বাড়বে। কিন্তু সরকার কোনও উদ্যোগী হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দাবি ছিল বকখালি বন দফতর থেকে হেনরিজ আইল্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রোপওয়ের ব্যবস্থা করা হোক। ওই রোপওয়ে চড়ে জঙ্গল ও সমুদ্র দেখা যাবে। আকর্ষণও বাড়বে বকখালির।’’
এ বিষয়ে নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মালি মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার বাসিন্দাদের দাবিগুলির বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছিল। সমস্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
এ বিষয়ে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘সৈকতে পর্যটকদের জন্য তৈরি হওয়া শৌচালয় ও খাবার জন্য ভবনটি নির্মাণের পর পরিবেশ দফতর থেকে অভিযোগ আসায় চালু করা যায়নি।’’ বাকি বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।