এই রাস্তা ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এতদিনে কাজের অগ্রগতি বলতে খুঁড়ে ফেলা পুরো রাস্তার কিছু অংশ ইটের খোওয়া ফেলা হয়েছে। কোথাও ফেলা হয়েছে স্টোনচিপ। কোথাও এখনও কিছুই পড়েনি। পুরোটাই মাটি।
হাওড়ার শ্যামপুর-১ ব্লকের ভগবানপুর গ্রামে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে একটি রাস্তা তৈরিতে দেখা গেল এমন ছবি। রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার। শ্যামপুর-শিবগঞ্জ রাস্তার ধারে চেকপোস্ট থেকে ভগবানপুর গ্রামের উপর দিয়ে রাস্তাটি চলে গিয়েছে জাগলিতে দামোদর পর্যন্ত। অনেক আগে এই রাস্তায় ইট পাতা হয়েছিল। ডিঙাখোলা, রামেশ্বরপুর, জাগলি, শিবগঞ্জ, ভগবানপুর প্রভৃতি গ্রামের মানুষ এই রাস্তায় যাতায়াত করেন। ছোট গাড়ি, সাইকেল, মোটরবাইকেরও নিত্য আনাগোনা এই রাস্তায়। বাসিন্দাদের আবেদন মেনে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে রাস্তাটি পাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। বরাদ্দ হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। ঠিকা সংস্থা কাজ শুরু করে প্রায় আড়াই বছর আগে। রাস্তার সব ইট তুলে ফেলা হয়। তারপর কিছু অংশে স্টোনচিপ, ইটের খোওয়া ফেলার পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কেন বন্ধ হল কাজ?
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, রাস্তাটি চওড়া হওয়ার কথা ১৮ থেকে ২০ ফুট। কিন্তু কিছু জায়গায় ওই মাপে রাস্তা পাওয়া যাচ্ছিল না। গ্রামবাসীরাও জমি ছাড়তে রাজি হননি। ফলে কাজ আটকে যায়। ঠিকা সংস্থাও কাজ বন্ধ করে দেন। জেলা পরিষদের এক কর্তা জানান, হাওড়া ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। ফলে জেলায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে অনেক রাস্তার ক্ষেত্রেই জমির অভাব দেখা দেয়। এই প্রকল্পে যে টাকা বরাদ্দ থাকে তাতে জমি কেনাও যায় না। এর ফলে সমস্যা তৈরি হয়। ভগবানপুরেও সেই কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ভগবানপুরে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার কোথাও স্টোনচিপ, কোথাও খোওয়া ফেলা হয়েছে। অসুবিধা হলেও তার উপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে ছোট যানবাহন থেকে লোকজন যাতায়াত করছে। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জিত মাইতি বললেন, ‘‘এখন যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে ইটের রাস্তাই ভাল ছিল। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা প্রকল্পে রাস্তা করতে গিয়ে আরও সমস্যা বেড়েছে।’’ তিনি জানান, কয়েক মাস পরেই বর্ষা। গত বছর বর্ষায় ভুগতে হয়েছে সকলকে। এ বারও না সেই পরিস্থিতি হয়!
জেলা পরিষদের সিপিএম সদস্য অনুপ মাজি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের (পূর্ত) স্থায়ী সমিতির বৈঠকে একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ জেলা পরিষদের (পূর্ত) স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার পর বলতে পারব।’’
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি সমস্যার জন্যই কাজ করা যাচ্ছে না। গ্রামবাসীদের পাল্টা প্রশ্ন, জমির সমস্যা তো সমীক্ষার সময়েই জানতে পারার কথা। সেই সমস্যা মিটিয়েই কাজ শুরু করা উচিত ছিল। তা না করে রাস্তা থেকে সব ইট তুলে ফেলে গ্রামবাসীদের অসুবিধা করার কী প্রয়োজন ছিল?