ছাঁটাই: রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে কাটা গাছের গুঁড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে
রাস্তা সম্প্রসারণের সরকারি কাজে হুগলিতে অহরহ কাটা হচ্ছে বড় বড় গাছ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থা, নিয়মমাফিক ফের গাছ লাগাচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে, পরিবেশের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ডানকুনি থেকে চাঁপাডাঙা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার অহল্যাবাঈ রোড সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডানকুনি থেকে মগরা— ২৮ কিলোমিটার দিল্লি রোড সম্প্রসারণের কাজ চলছে। দুই রাস্তার পাশেই বট, শিরিষ, মেহগনি, অশ্বত্থ-সহ প্রচুর বড় গাছ ছিল। কিন্তু সম্প্রাসারণের কারণে সে সব গাছ কাটা পড়েছে। কিন্তু নিয়মমাফিক নতুন চারা লাগানো হল কই? পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু হুগলি নয়, দেশ জুড়েই মোটামুটি একই ছবি। রাস্তার জন্য গাছ কাটা হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু সেই জায়গায় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেই। এতে পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ জন্য সার্বিক সচেতনতা জরুরি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও নতুন রাস্তা নির্মাণ বা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বন দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে গাছ কাটা যেতে পারে। কিন্তু এর প্রাথমিক শর্ত— একটি গাছ কাটা হলে অন্তত পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে। শুধু তাই নয়, যে প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে, সেই প্রজাতির গাছই লাগাতে হবে। অন্য গাছ নয়। পাশাপাশি, গাছ কাটা বাবদ নির্দিষ্ট টাকা বন দফতরে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী সংস্থাকে। যদি কোনও কারণে ওই সংস্থা গাছ না-লাগায়, সে ক্ষেত্রে বন দফতরে জমা দেওয়া টাকা থেকেই গাছ লাগিয়ে দেওয়াই সরকারি নিয়ম।
দিল্লি রোড সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ছবি: দীপঙ্কর দে
পরিবেশবিদদের মতে, রাস্তার পাশে গাছ লাগানো অত্যন্ত জরুরি। কারণ, রাস্তায় গাড়ির ধোঁয়া থেকে প্রচুর কার্বন নির্গত হয়। একমাত্র গাছই সেই কার্বনের অনেকটা টেনে নেয়। তার উপর গাছ রাস্তার পাশে ভূমিক্ষয় রোধ করে। ফলে, প্রচুর বৃষ্টি বা অন্য কোনও প্রাকৃতিক কারণে রাস্তা ধসে যায় না। তাতে রাস্তার মানও ঠিক থাকে। রাস্তার পাশে গাছ কাটার জেরে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের লাটাগুড়ি এবং দক্ষিণবঙ্গে বসিরহাটে মামলা হয়ে গিয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই কলকাতা হাইকোর্ট গাছ কাটায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে।
পরিবেশবিদদের ক্ষোভ, যে ক্ষেত্রে মামলা করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে কিছুটা হলেও সুরাহা হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও সুরাহা হচ্ছে না। বন দফতর বা পূর্ত দফতরের কোনও নজরদারি নেই নির্মাণকারী সংস্থার উপর। মূল্যবান সরকারি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। সেই সব গাছের টাকাও বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তা সরকারি কোষাগারে ঢুকছে না। সেই ব্যাপরে কোনও সরকারি নজরদারিও নেই বলে অভিযোগ।
জেলা পূর্ত দফতরের কর্তা পার্থ কুণ্ডু বলেন, ‘‘কাজ শুরুর আগে কত গাছ কাটা পড়বে, তা নিয়ে সমীক্ষা হয়। গাছ পুঁততে টাকারও হিসেব হয়। আমাদের টাকা থেকেই গাছ লাগিয়ে দেওয়ার কাজ করে বন দফতর।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা স্বীকার করেছেন, ‘‘নজরদারি বাড়ানো জরুরি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’ কিন্তু সেই নজরদারি কবে শুরু হবে বা কবে গাছ পোঁতা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।